শ্রমবাজার : দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের


, আপডেট করা হয়েছে : 25-02-2024

শ্রমবাজার : দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের

দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের কোটার বিপরীতে গমনেচ্ছু প্রার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ হাজার প্রার্থীর কোটা পূরণে গত ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি দুই দিন সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে এই কোটা পূরণ হয়েছে। চলতি বছর দেশটির শ্রমবাজারে ১০ হাজার কর্মী পাঠানোর কোটা পেয়েছে বাংলাদেশ।


 


গত বছর কোটা ছিল সাত হাজার।


 


গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।


দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহী প্রার্থীরা বেশির ভাগই তরুণ। তাঁরা মনে করছেন, এই শ্রমবাজারে যেতে পারলে অল্প সময়ে বেশি টাকা আয় করা যাবে।


 


এ জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়ে খুব দ্রুত তাঁরা সাড়া দিয়েছেন।


 


অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই আগ্রহ ও চেষ্টার কারণে বাংলাদেশের জন্য এটি বড় শ্রমবাজার হয়ে দাঁড়াতে পারে।


২০০৮ সাল থেকে এই শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। বোয়েসেলের এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) আওতায় সেখানে কর্মী পাঠানো হয়।


 


শুরুর দিকে তেমন কর্মী না গেলেও বর্তমানে এই শ্রমবাজারের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।


 


গত ২০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে ১০ হাজার কর্মীর কোটা পায় বাংলাদেশ। এই প্রথম উৎপাদন ও জাহাজ শিল্প ছাড়াও নির্মাণ ও মৎস্য শিল্পে কর্মী পাঠানোর কোটা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই ১০ হাজার কর্মীর মধ্যে সাড়ে সাত হাজার উৎপাদনশিল্পে, ৩০৪ জন জাহাজশিল্পে, এক হাজার ৮৭৭ জন মংস্যশিল্পে ও এক হাজার ৯৫ জনকে নির্মাণশিল্পে নেওয়া হবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করতে যেতে আগ্রহীদের কোরিয়ার ভাষা ও দক্ষতার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়।


 


বোয়েসেল সূত্রে জানা যায়, কর্মীরা ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী আবেদন করেন। এর মধ্যে উৎপাদনশিল্পে ১৭ হাজার ৪৬০ জন, জাহাজশিল্পে এক হাজার ১৬৪ জন, মৎস্যশিল্পে সাত হাজার ৭৬০ জন ও নির্মাণশিল্পে চার হাজার ২৬৮ জন প্রার্থী রয়েছেন।


গত বৃহস্পতিবার বোয়েসেল দপ্তরে গিয়ে সকাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহী কর্মীদের আসতে দেখা যায়। প্রক্রিয়া জেনে তাঁরা নিবন্ধন করেন। বেশির ভাগ কর্মী জানান, তাঁরা উৎপাদন ও মংস্য শিল্পে কাজ পেতে আবেদন করছেন।


নরসিংদীর বেলাব থেকে এসেছেন আহসান হাবিব ও রিয়াদ হোসেন। তাঁরা ছয় মাস ধরে জেলায় একটি বেসরকারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে কোরিয়ান ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বিজ্ঞপ্তি জেনে আবেদন করতে তাঁরা প্রবাসী কল্যাণ ভবনে চলে এসেছেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।


আহসান হাবিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অন্য শ্রমবাজারে যেতে হলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে ধরতে হয়। তারা অনেক অর্থ চায়। তা ছাড়া বেতন নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার অনেক ভালো। এখানে ভালো আয় করতে পারব।’


একই কথা জানান আহসান হাবিবের বন্ধু রিয়াদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষিত যুবক। কোরিয়ার ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। সেখানে যেতে তেমন খরচও লাগবে না। এখন শুধু পরীক্ষায় পাস করলেই হয়।’


আবেদনের জন্যও প্রয়োজন যোগ্যতা


দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ পেতে বেশ কিছু যোগ্যতা থাকতে হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্মীকে কোরিয়ান ভাষা বুঝতে, বলতে, পড়তে ও লিখতে পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। এসএসসি পাস কর্মীরাই শুধু আবেদন করতে পেরেছেন। ১৮ বছরের নিচে ও ৩৯ বছরের ওপরের কেউ আবেদন করতে পারেননি। যে খাতে কর্মীরা আবেদন করেছেন, সেই খাতে প্রশিক্ষণসহ বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।


বোয়েসেলের তথ্য মতে, উল্লিখিত যোগ্যতা ছাড়াও প্রার্থীকে বর্ণান্ধ বা রং বোঝার সক্ষমতার সমস্যামুক্ত থাকতে হবে। পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ ও কথোপকথনে মার্জিত হতে হবে। কর্মীকে অবশ্যই মাদকমুক্ত থাকতে হবে। কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে জেল বা অন্য কোনো শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেতে পারবেন না। দক্ষিণ কোরিয়ায় আগে অবৈধ প্রক্রিয়ায় গিয়ে থাকলে এখন আর আবেদন করতে পারবেন না। আবেদন করলেও তা বাতিল হবে। প্রার্থীরা যেকোনো একটি ধাপে আবেদন করতে পারবেন। কোনো প্রার্থী দুই ধাপে আবেদন করলে তাঁর নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে। দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকা ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারবেন না। কোরিয়ায় পাঁচ বছরের বেশি অবস্থানকারীরা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার