রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাছে এবার আমের মুকুল কম


, আপডেট করা হয়েছে : 03-03-2024

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাছে এবার আমের মুকুল কম

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাছে গাছে উঁকি দিতে শুরু করেছে আমের মুকুল। কৃষি বিভাগ বলছে, মুকুল দ্রুত বের হয়ে গুটি বাঁধার জন্য যে ধরনের আবহাওয়া থাকা প্রয়োজন, এখন সেটাই আছে। এই সময়ে গাছের ভালো পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


কৃষি বিভাগের এমন পরামর্শে বাগানে বাগানে আমগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ গাছের গোড়ায় সেচ দিচ্ছেন, কেউবা আবার গাছে স্প্রে করছেন কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক। তবে এবার গাছে মুকুল কম থাকার কথা জানিয়ে আশঙ্কাও করছেন চাষিরা।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। ওই মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো উৎপাদন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণও হয়। এ বছর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে ফলনযোগ্য আমবাগান আছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ টন; যা গত বছরের তুলনায় ৩৪ হাজার ২৫২ টন বেশি।


কৃষি বিভাগ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরলেও চাষিরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন। রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাঁধাইড়ের আমচাষি জুলফিকার আলী বলেন, ‘এবার গাছে মুকুলের পরিমাণ কম মনে হচ্ছে। গত বছর ভালো মুকুল থাকার পরও অনেক গুটি ঝরে গিয়েছিল খরার কারণে। এবার গাছে মুকুলই কম দেখা যাচ্ছে। সামনে খরা শুরু হলে গুটি কতটা টিকবে তা নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় আছি।’ 

রাজশাহীর পবা উপজেলার বিয়ানাবোনা গ্রামের আমচাষি সাইদুর রহমান গত সোমবার সকালে তাঁর বাগানের গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করছিলেন। সাইদুরের প্রায় দুই বিঘার আমবাগানের অল্প কিছু গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে স্বর্ণালি মুকুল দেখা যায়। সাইদুর রহমান বলেন, ‘গতবার এই সময়ে গাছ মুকুলে ভরে ছিল। এবার অল্প কিছু গাছে মুকুল এসেছে। মুকুল আসতে দেরি কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। সে জন্য গাছের গোড়ায় সেচ দিচ্ছি। পাতায় স্প্রে করছি।’


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘ফসলের ক্ষেত্রে দুই-পাঁচ দিন এদিক-সেদিক হতে পারে। এটা কোনো সমস্যা না। রাস্তার ধারের অযত্নে থাকা গাছগুলো দেখে মনে হচ্ছে মুকুল কম এসেছে। বাস্তবে বাগানে বাগানে পরিচর্যার মধ্যে থাকা গাছের ৪০ শতাংশে মুকুল চলে এসেছে। বাকি গাছগুলোতেও কয়েক দিনের মধ্যে মুকুল চলে আসবে। এখন পরিচর্যা করতে হবে।’


এদিকে অন্য বছরগুলোতে সাধারণত ফাল্গুন মাসেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমবাগানগুলোয় শতভাগ মুকুল আসে। কিন্তু এবার এ পর্যন্ত এসেছে মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ গাছে। যে মুকুল এসেছে তা টিকিয়ে রাখার আশায় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, গাছে আশানুরূপ মুকুল না আসলে কীটনাশক খরচ ওঠানো সম্ভব হবে না।


তবে কৃষি বিভাগ বলছে, পুরোনো বাগানের চেয়ে পরিকল্পিতভাবে নতুন করে লাগানো বাগানে মুকুল এসেছে প্রায় শতভাগ। মুকুল টিকিয়ে রাখতে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ফাল্গুনের তৃতীয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত মুকুলের দেখা নেই বাগানগুলোতে। চাষিদের দাবি, গতবারের তুলনায় এবার আমগাছে তিন ভাগের এক ভাগ মুকুল এসেছে।


শিবগঞ্জের গোবরাতলা এলাকার বাগানমালিক সাইফুল আলম জানান, মাস দেড়েক আগে তাঁর একটি আমবাগান আগাম বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। সেই বাগানে আশানুরূপ মুকুল না আসায় এখন টাকা ফেরত চাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।


কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৫টি আমগাছ রয়েছে। তবে এখনো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, চলতি বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার গাছে মুকুল কম এসেছে। মুকুল ও গুটি টিকিয়ে রাখতে কৃষকদের কৃষি বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার