পণ্যের মূল্য কমলেও এখনো বাড়তি


, আপডেট করা হয়েছে : 29-03-2024

পণ্যের মূল্য কমলেও এখনো বাড়তি

বাজারে রমজাননির্ভর ছয় পণ্য-ছোলা, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চিনি, পেঁয়াজ ও খেজুরের দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলছে। তবে যে হারে দাম বেড়েছিল ঠিক সে হারে কমেনি। আবার নামমাত্র দাম কমলেও রোজা শুরুর ৩ মাস আগই এসব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ানো হয়েছে। ফলে ধাপে ধাপে ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন আর অসাধু ব্যবসায়ীরা রোজায় পণ্যের দাম বাড়ায় না। রমজান শুরুর ২ থেকে ৩ মাস আগেই পণ্যমূল্য বাড়িয়েছে অসাধুরা। যাতে কেউ বলতে না পারে রোজায় দাম বেড়েছে। আবার ১০ থেকে ১৫ রোজায় দাম কমাতে থাকে। এই দাম কমার পুরো ক্রেডিট নেয় বাজার তদারকি সংস্থা। তবে এই ফাঁকে অসাধুরা অতি মুনাফা লুটে নেয়। আর এমন পরিস্থিতি গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে চলছে। এদিকে খুচরা বাজারের পণ্যমূল্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নভেম্বরে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা। আর প্রথম রোজায় বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকায়। তবে ১৭ রোজা বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা। পাশাপাশি প্রতি কেজি ভালোমানের মসুর ডাল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা, আর প্রথম রমজানে বিক্রি হয় ১৪০ টাকা। যা ১৭ রমজান পর্যন্ত একই দামে ক্রেতার কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি ছোলা নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। ডিসেম্বরে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা। প্রথম রোজায় বিক্রি হয় ১১০-১১৫ টাকা। তবে বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে এই পণ্য ১০৫-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল নভেম্বরে প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা, ডিসেম্বরে দাম বেড়ে ১৭০ টাকা ও প্রথম রোজায় বিক্রি হয় ১৭০-১৭২ টাকা। তবে সরকার মূল্য বেঁধে দেওয়া দাম কমে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি তিউনেশিয়ান খেজুর নভেম্বরে ৩০০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। আর সেই একই খেজুর প্রথম রোজায় বিক্রি হয় ৬০০ টাকা কেজি। আর বৃহস্পতিবার ১৭ রোজায় ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দেশি জাত বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে ফেব্রুয়ারির শুরু ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। মার্চে ফের দাম বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবর ও দেশি জাত বাজারে সরবরাহ বাড়ায় ১৭ রোজায় প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে যেসব পণ্যের দাম কমছে তা আগে থেকেই বাড়তি ছিল। দেখা গেছে যে হারে দাম বেড়েছিল, সে হারে দাম কমেনি। আবার ঈদ ঘিরে আরও কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। সেক্ষেত্রে আমরা ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না।

একই বাজারের ব্যবসায়ী তুহিন বলেন, সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করায় সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। পাশাপাশি ছোলা কেনার চাহিদা কমায় পাইকারিতে দাম কমেছে। ফলে খুচরা বাজারেও দাম কমতির দিকে। মিল থেকে চিনির সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। এছাড়া মসুর ডাল এখনও বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা বছরের একেকটা সময় একেক পণ্য সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। তবে ধর্মীয় কোনো উৎসব রোজা কিংবা ঈদে নিয়ম করে কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে নাজেহাল করে তোলে। এবারও বাজারে চিত্র একই। তবে কয়েক বছর থেকে বিক্রেতারা পণ্যের দাম রমজানে বাড়ায় না। রোজা শুরুর ২ থেকে ৩ মাস আগেই বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করে। ১০ রোজার পর থেকে দাম কমাতে থাকে। আর এই চিত্র গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে। কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর এই সময়ের মধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কেটে হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে নিচ্ছে। তাই ভোক্তাকে এই ভোগান্তি থেকে বের করে আনতে হলে রোজা শুরুর ২ থেকে ৩ মাস আগ থেকেই বাজারে অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, রোজা শুরুর আগ থেকেই অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাজারে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। যে কারণে কিছু পণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় হয়েছে। তাছাড়া অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে জনবল সংকটে অনেক কিছু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করা সম্ভব হচ্ছে না।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার