পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত: বাস্তবায়ন হয়নি এক যুগেও


, আপডেট করা হয়েছে : 30-03-2024

পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত: বাস্তবায়ন হয়নি এক যুগেও

একযুগ পার হলেও বাস্তবায়ন হয়নি পুরান ঢাকা থেকে সব কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও ২ হাজার কেমিক্যাল গুদামের বিপরীতে শ্যামপুরে অস্থায়ীভাবে মাত্র ৫৪টি প্রস্তুত হয়েছে। সেখানে এখনো পর্যন্ত যায়নি একজনও ব্যবসায়ী। পাশাপাশি টঙ্গীতে আরও ৫৩টি অস্থায়ী কেমিক্যাল গুদাম তৈরির কাজ চলমান। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে স্থায়ীভাবে ৩০০ একর জায়গায় কেমিক্যালপল্লি তৈরির কাজ চলছে ‘কচ্ছপগতি’তে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর কার্যকর তৎপরতা না থাকার কারণেই মূলত কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পুরান ঢাকায় যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটতে পারে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

তাদের আরও অভিমত-যেখানে-সেখানে কেমিক্যাল গুদাম তৈরি করলে হবে না। স্থানান্তরের স্থানে গুদাম গেলে ব্যবসা হবে কিনা-তা বিবেচনা করতে হবে। সরকার যেখানে গুদাম স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে যদি ব্যবসা না হয় তাহলে তো ব্যবসায়ীরা যেতে চাইবেন না। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগেও কঠোর হতে হবে। পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ব্যবসা জমজমাট চলছে। এমন পরিবেশ থেকে তারা সহজে সরতে চাইবে না। সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে শ্যামপুরের উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরির ৬ একর জমিতে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর এই গুদাম তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গুদাম তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জুনে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। একেকটি গুদামের আয়তন ১ হাজার ৪৪৪ বর্গফুট। সেখানে দুটি অফিস ভবন, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, মসজিদ, গভীর নলকূপ, পানির ট্যাংকসহ কিছু স্থাপনা রয়েছে। প্রতিটি গুদাম ঘরের মাঝে একটি করে ফায়ার হাইড্রেন্ট বা আগুন নেভানোর পানির কল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ৬০টির বেশি সিসি ক্যামেরা দিয়ে পুরো এলাকার ওপর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হয়েছে ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কাজ করেছে। এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস।

আরও জানা গেছে, শ্যামপুরের অস্থায়ী কেমিক্যাল গুদাম বরাদ্দ পেতে হলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইমপোর্টার অ্যান্ড মার্টেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ অ্যাসিড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে। এসব ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার অন্তত ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে সমিতির সদস্য হননি-এমন ব্যবসায়ীরাও আবেদন করতে পারবেন। ৪ জুন উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত সেখানকার একটি গুদামঘর ভাড়া হয়েছে। যে গুদামঘরটি ভাড়া হয়েছে, সেটিও পুরান ঢাকা এলাকা থেকে আসেনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর অগ্নিদুর্ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যুর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩১টি সুপারিশ দেয়। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিমতলীর ঘটনার ৯ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৮০ জন প্রাণ হারান। গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ ছিল পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম বা কারখানা সরিয়ে নেওয়া। ওই সময়ে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম সরানোসংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ২০১১ কেরানীগঞ্জে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আলোকে সেখানে ২০ একর জমি চিহ্নিত করে। সেখানে ১৭ তলা কয়েকটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে রাসায়নিক কারখানা ও গুদামের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবও করেছিল। সে সময় ব্যবসায়ীদের সম্মতি না পাওয়ায় ওই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার