ছাঁটাই বা পলিশের মাধ্যমে প্রতি বছর সাত হাজার ২৬০ কোটি টাকার চাল বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পলিশ করে সাধারণ চাল উন্নতমানের বলে বাজারজাত করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও তা বন্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো সরকারি পদক্ষেপ নেই।
অপরদিকে চালের ওপরের লাল আস্তরণ পলিশিংয়ের ফলে চালের গুণগতমান তথা পুষ্টি অর্ধেক কমে যায়। অতিসাদা ধবধবে চাল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। পলিশিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চাল নষ্ট হলেও তা প্রতিরোধে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তর নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যুগান্তরকে বলেছেন, প্রতি ১০০ টন চাল পলিশ করায় কমপক্ষে ৫ মেট্রিক টন চাল কমে যায়। সে হিসাবে বছরে ১৫ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এত বিপুল পরিমাণ চাল নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। চালের বস্তায় ধানের জাত লেখার বিষয়ে পরিপত্র জারি হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে চাল পলিশ বন্ধ করা হবে।
তিনি বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের সাফ বলে দিয়েছি, চাল পলিশের ব্যবসা আর চলবে না। আমরা আর এ সুযোগ দিতে চাই না।
জানতে চাইলে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক যুগান্তরকে বলেন, চাল পলিশের বিষয়টি সত্য। সবাই জানেন এবং বোঝেন। কম দামের চাল পলিশ করে চিকন করা হয়। সেই চাল অর্থাৎ ৫০ টাকা কেজি দরের চাল পলিশের পর ৮০ টাকা করে কেজি বিক্রি করা হয়।
প্রতি কেজি চালে তারা ৩০ টাকা লাভ করছেন। সেই হিসাবে প্রতি মণে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ করছেন। কিন্তু ভোক্তা ঠকছে। ভোক্তার পকেট কাটা হচ্ছে। ভোক্তা অপুষ্টিতে ভুগছে।
তিনি আরও বলেন, রাইস পলিশিং করে যে আবরণটা বের করে ফেলা হয় তা থেকে রাইসব্রান তেল উৎপাদন সম্ভব। এটি করতে পারলে দেশে তেলের বার্ষিক চাহিদার ৩০ শতাংশ কমে যেত। উল্লেখ্য, দেশে এখনও কিছু প্রতিষ্ঠান রাইসব্রান তেল উৎপাদন করছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ হ্যাস্কিং অটো-রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. লায়েক আলী যুগান্তরকে বলেন, বছরে ১৫ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল বাতাসে উড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। চাল ছাঁটাইয়ের সময় ওপরের কালো আবরণটা পরিষ্কার করা হয়। এর বেশি পলিশ করা হয় না। কম দামের চাল পলিশ করে উচ্চমূল্যে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা অভিযোগ।