শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন: সড়কে তীব্র যানজট, ভোগান্তির শঙ্কা


, আপডেট করা হয়েছে : 09-04-2024

শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন: সড়কে তীব্র যানজট, ভোগান্তির শঙ্কা

ঈদের মাত্র একদিন আগে সরকারি ছুটি শুরুর রেশ গড়াবে সড়কে। এতে তীব্র যানজট তৈরি ও পরিবহণ সংকটে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হতে পারেন-এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, সরকারি অফিস-আদালতে আজ শেষ কার্যদিবস। কাল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে। এদিন পোশাক কারখানাগুলোও বন্ধ দেওয়া হবে। একই দিন সব প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেওয়ায় লাখ লাখ মানুষ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ পালন করতে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। তখন বিপুলসংখ্যক যাত্রীর জন্য একদিকে গণপরিবহণ সংকট, অপরদিকে গণপরিবহণ ছাড়াও অন্যান্য যান চলাচল বেড়ে যাওয়ায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-মাওয়া এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অবস্থা বেশি খারাপ হতে পারে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণে এসব আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ৪ এপ্রিল ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


আরও জানা যায়, যানজট ও ভোগান্তি কমাতে ওই প্রতিবেদনে সড়কে যান নিয়ন্ত্রণসহ ১৮টি সুপারিশ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। টোলপ্লাজায় গাড়ির জট এড়াতে ডিজিটালাইজড পদ্ধতি প্রয়োগ এবং চালকরা যাতে টোলের খুচরা টাকা আগেই প্রস্তুত রাখেন, সেই নির্দেশনা প্রচারের সুপারিশ করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে মোটরসাইকেলে দূরপাল্লার যাত্রীবহন এবং আনফিট গাড়ি যেন চলাচল করতে না পারে, সেই পদক্ষেপ নিতেও বলা হয়েছে।


ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ ও মহসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, একই দিনে সড়কে অনেক গাড়ি নামবে। এতে চাপও তৈরি হবে। তবে যানজট যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমাদেরও প্রস্তুতি রয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। সড়কে দুর্ঘটনা না হলে যানজট হবে না বলে আশা করি। তিনি জানান, সোমবার দুপুরের পর গাজীপুরে অনেক পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় চন্দ্রা এলাকায় গাড়ির চাপ তৈরি হয়েছে। সেখানে ধীরগতি হলেও যানজট নেই। একইভাবে অন্যান্য রুটে এখনো যানজটের খবর পাওয়া যায়নি।


এ বছর ৩০টি রোজা হলে ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঈদ উদ্যাপন হবে। আর রোজা ২৯টি হলে বুধবার ঈদ হবে। ঈদ সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে বাড়ি যেতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। রোববার পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার থেকে গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করেছে।


গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার টানা পাঁচদিন সরকারি ছুটি থাকায় এক কোটির বেশি মানুষ রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় যাবেন। একই সঙ্গে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াতকারী মানুষের সংখ্যাও বেশি হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াতের কারণে গাড়ির চাপ বেড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে গণপরিবহণের সংকটও দেখা দিতে পারে। এ সময়ে নিম্ন-আয়ের মানুষ খোলা ট্রাক, পিকআপ, লেগুনা প্রভৃতি যানবাহনে গন্তব্যে রওয়ানা হন। এতে একদিকে যেমন সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ে, তেমনই এসব গাড়ি নষ্ট হয়ে যানজট তৈরি করে। এসব গাড়ি যাতে সড়কে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য সুপারিশ করা হয়েছে।


প্রতিবেদনে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যানজট কী কী কারণে হতে পারে, তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মোটা দাগে যানজটের আশঙ্কার কারণ হিসাবে এতে সড়কের অবকাঠামোগত সমস্যা ও ত্রুটি, বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা, সড়কের পাশে বাজার, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, উলটোপথে গাড়ি চলাচল, সড়কের ওপর বাস, টেম্পোস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।


দুটি মহাসড়ক ও ১১টি সেতুর টোলপ্লাজায় গাড়িজটের বড় আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ঈদুল ফিতরের গাড়ির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়েছে, ওই বছর শেষ তিনদিনে পদ্মা সেতুতে দৈনিক ২৫ হাজার থেকে ৩৭ হাজার, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪৭ হাজার থেকে ৬৯ হাজার এবং মেঘনা সেতুতে গড়ে সাড়ে ৪৭ হাজার গাড়ি পার হয়েছে। প্রতিবেদনে সেতুতে টোল আদায়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই ঈদেও উভয়প্রান্তে যানজট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এছাড়া চলতি এপ্রিলে কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা থাকায় নৌপথের যান সতর্কতা মেনে চলাচলের সুপারিশ করা হয়েছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার