অরক্ষিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট


, আপডেট করা হয়েছে : 22-04-2024

অরক্ষিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট অরক্ষিত থাকায় জালিয়াতচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে চক্রের সদস্যরা জাল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করেছে। বোর্ডের ওয়েবসাইট পরিচালনা বা সাইটে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন-বিয়োজনে গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড নেই। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।


সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়া সার্টিফিকেট বাণিজ্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে (৫৪) গ্রেফতার করা হয়েছে।


সূত্র জানায়, ছাত্রছাত্রীর তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন-নিবেদনের ফোকাল পারসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। ফোকাল পারসন না হলেও সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামানের কাছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের গোপন পাসওয়ার্ড ছিল। নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে তার ওয়েবসাইটের সংবেদনশীল কাজগুলো করার কথা ছিল।


কিন্তু রক্ষক হয়েও তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন ভক্ষকের ভূমিকায়। বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালদের সঙ্গে তার গোপন যোগাযোগ ছিল। অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের তথ্য সংযোজন করতেন তিনি।


ডিবি সূত্র জানায়, ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেট কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেন শামসুজ্জামান। বাংলাদেশসহ যে কোনো দেশে বসে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে গুগলে সার্চ করলে ওয়েবসাইট থেকে তা সঠিক পাওয়া যায়। এসব অভিযোগে ১ এপ্রিল রাজধানীর পীরেরবাগ এলাকা থেকে শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করে ডিবি। সংশ্লিষ্ট বোর্ডের চাকরিচ্যুত এবং বর্তমানে শামসুজ্জামানের ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত সহকারী ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে শামসুজ্জামানকে গ্রেফতারের পর ডিবির কাছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ আবেদন করে।


এতে বলা হয়, ‘শামসুজ্জামানকে গ্রেফতারের পর থেকে তারা ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে পারছেন না। কারণ, তাদের কাছে এ সংক্রান্ত পাসওয়ার্ড নেই। তার কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে তা তাদের কাছে সরবরাহ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।’


রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, সার্টিফিকেট বাণিজ্যের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় শনিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে আলী আকবর খানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে (৫৪) গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। যে কোনো সময় বোর্ড চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে।


গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চক্রের সঙ্গে জড়িত কামরাঙ্গীরচর হিলফুল ফুযুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানকে ১৮ এপ্রিল এবং ঢাকা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমান ওরফে মামুনকে ১৯ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, শামসুজ্জামান ও তার সহযোগীরা বোর্ডের ওয়েবসাইটে জালজালিয়াতির মাধ্যমে যেসব অপকর্ম করেছেন, এর দায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।


ডিবি জানায়, শামসুজ্জামান ও সেহেলা ছাড়াও চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার সদর থানা এলাকা থেকে গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার কলিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র, শত শত সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির মতো বিশেষ কাগজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি হওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, শতাধিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়েছে।


ডিবি জানায়, দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সঙ্গে সিবিএ নেতা আব্দুল বাছেদ, রেজিস্ট্রেশন শাখার মামুনুর রশীদ, একটি বিশেষ শাখার ইনচার্জ শামসুল আলম, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া আব্বাসী প্রমুখ জড়িত। ডিবিকে শামসুজ্জামান জানায়, ‘ভয় দেখিয়ে শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা তাকে অপকর্ম করতে বাধ্য করত। এছাড়া কতিপয় সাংবাদিক কাগজ নিয়ে এসে বলত, আপনার বিরুদ্ধে জালজালিয়াতির তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? পরে রিপোর্ট না করার বিনিময়ে টাকা দাবি করত। আমি বাধ্য হয়েই তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছি।’


বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী রিমান্ডে : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী সেহেলা পারভীনের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম। এদিকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার