১১ বছরেও শেষ হয়নি বিচার


, আপডেট করা হয়েছে : 24-04-2024

১১ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

সাভারে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ১১ বছর আগে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা ভবন। অবৈধভাবে কারখানা স্থাপন করা ভবন ধসে পড়ায় নিহত হন এক হাজার ১৩৪ জন। আহত হন আরও দুই হাজারের বেশি। তাদের সবাই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে দুটি মামলা হয়। এর কোনোটিরই তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও অন্য মামলায় রয়েছে স্থগিতাদেশ। আসামি পক্ষ বলছেন, দুই মামলায় বিচার শেষ না হওয়ায় বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন সোহেন রানা। রাষ্ট্রপক্ষ বলছেন, মামলার অভিযোগ গঠনে আসামিরা উচ্চ আদালতে যাওয়ায় সাক্ষ্য শুরু হতে কয়েক বছর চলে যায়। দ্রুত মামলা দুটি নিষ্পত্তি করা হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা।


জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে এই দুই মামলার অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন বিচারিক আদালত। অভিযোগ গঠনের প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে একই ঘটনায় দায়ের করা ইমারত নির্মাণ আইনের মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। মামলা স্থগিত থাকায় অভিযোগ গঠনের আট বছরেও শুরু হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ।


আদালত সূত্র জানায়, হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের পর এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান আট আসামি। এদের মধ্যে সাতজনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়। মামলার আরেক আসামি সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলীর পক্ষে করা আবেদনে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদী সাভার থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফের সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।


মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৮৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বর্তমানে চলমান রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২১ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এদিন চারজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। চারজনের মধ্যে তিনজনের জেরা শেষ হলেও একজনের জেরা শেষ হয়নি। ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত নতুন দিন ধার্য করেন। অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কয়েকজন আসামি রিভিশন আবেদন করেন। এদের মধ্যে আসামি ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে মামলাটি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মামলার আরেক আসামি সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাতউল্লাহর পক্ষে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর এক বছরের জন্য মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। হত্যা মামলার বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বিমল সমদ্দার যুগান্তরকে বলেন, আমরা আলোচিত মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। আশা করছি মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা যাবে। ইমারত নির্মাণ আইনের মামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল যুগান্তরকে বলেন, মামলাটি উচ্চ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যায়নি। এছাড়া সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন দিনও পড়েনি। আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, মামলা দুটির বিচার শেষ না হওয়ায় আসামি সোহেল রানা কারামুক্তি হতে পারছেন না। তিনি বিচারহীনভাবে কারাগারে আটক রয়েছেন। পোশাক শ্রমিক হত্যা মামলায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা করেন।


২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে। মামলার ৪১ আসামির মধ্যে ভবন মালিক সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। তিনজনকে বাদ দিয়ে হত্যা মামলায় এখন আসামির সংখ্যা ৩৮ জন। ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন সাভার থানায় একটি মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।


সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, রান্না প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে ‘রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর : হাজারো প্রাণ ও স্বপ্নের গল্প’ নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের সম্মানজনক ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুদিনব্যাপী এ কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটি। সাভার বাসস্ট্যান্ডের রানা প্লাজার সামনে মঙ্গলবার সকালে আলোকচিত্র প্রদশর্নীর মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত পোশাক শ্রমিক জেসমিন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার শাখার সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, আহত জেসমিন, নিহত শ্রমিক আঁখি আক্তারের মা নাসিমা আক্তার, নিহত ফজলে রাব্বীর মা রাহেলা আক্তার, শাহিদার মা তাহেরা বেগম প্রমুখ।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার