পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ


, আপডেট করা হয়েছে : 27-04-2024

পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ

সারা দেশে পুলিশের সব স্থাপনা ও অস্ত্র-গোলাবারুদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রতিটি থানায় কমপক্ষে তিনটি সেইন্ট্রি পোস্ট নির্মাণসহ একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কখনো কোনো থানা বা পুলিশের স্থাপনা আক্রমণের শিকার হলে সদস্যদের মধ্যে কার কী দায়িত্ব থাকবে, কে কীভাবে সাড়া দেবেন তার পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে পুলিশের সব ইউনিটে।


বান্দরবানে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুটের মতো ঘটনা এড়াতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত আইজিপি মো. আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, সম্প্রতি বান্দরবানে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুট করে নিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে অ্যালার্ম প্যারেডের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এটি নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। ফায়ার সার্ভিসের মহড়ার মতো পুলিশও তার স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে অ্যালার্ম প্যারেড করে থাকে।


পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, এই অ্যালার্ম প্যারেডের কথা পুলিশের প্রবিধানে উল্লেখ আছে। থানা বা পুলিশের স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কে কোথায় অবস্থান করে দায়িত্ব পালন করবেন, তার একটি ম্যাপ থাকে। জরুরি প্রয়োজনে তারা দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দেবেন। থানা বা পুলিশের অন্যান্য স্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের অন্যত্র বদলি হয়, নতুন সদস্য এসে যুক্ত হন। তখন নতুন যিনি আসেন, তার দায়িত্ব কোন জায়গায় আছে, সেটির হালনাগাদ সময়মতো হয় না। পুলিশের অনেক স্থাপনায় নিরাপত্তার ঢিলেভাব সম্প্রতি পরিলক্ষিত হয়েছে। যে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


 


গত ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা এবং থানচিতে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। প্রথম দিন রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলার সময় পুলিশ এবং আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫ গুলি লুট করে নিয়ে যায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ হামলার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পার্বত্য এলাকায় যৌথ অভিযান চলছে। অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫০ জনের বেশি সশস্ত্র সন্ত্রাসী, উদ্ধার হয়েছে অস্ত্র। তবে অভিযান শুরুর তিন সপ্তাহ পরও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর নিরাপত্তার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ।


পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া নির্দেশনার অনুরূপ একটি নির্দেশনা ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরও তার আওতাধীন সব ইউনিট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়েছে।


ডিএমপির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল সদর দপ্তর থেকে দেওয়া নির্দেশনায় প্রতিটি থানায় কমপক্ষে তিনটি সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। তবে অবস্থার প্রেক্ষাপটে এর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। অতিরিক্তসংখ্যক পুলিশের ছুটি বা অন্যত্র দায়িত্বে না রাখার বিষয়ে খেয়াল রাখা। বাইরের কারও দেওয়া খাবার না খাওয়া। অস্ত্রাগার সুরক্ষিত রাখা। রাতে নির্দিষ্ট সময় পর থানায় বাইরের কেউ প্রবেশ করলে নিরাপত্তার স্বার্থে চেকিং এবং সতর্কতার সঙ্গে প্রবেশ করতে দেওয়া।


কোন প্রেক্ষাপটে কীভাবে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন, তার জন্য অ্যালার্ম স্কিম করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিষয়গুলো সময় সময় হালনাগাদ করতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর।


ডিএমপির একটি থানার ওসি বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিসের মহড়া যেভাবে হয়, ঠিক সেভাবে থানা আক্রান্ত হলে তা কীভাবে প্রতিরোধ করতে হবে, সে বিষয়ে মহড়াকে বলা হয় অ্যালার্ম প্যারেড। মাসে দুবার এই অ্যালার্ম প্যারেড করার জন্য প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। পুলিশের এ নির্দেশনা নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, সবাইকে সতর্ক রাখার জন্য মাঝেমধ্যেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন সুনির্দিষ্টভাবে কোনো হুমকি নেই। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ইস্যুও নেই।


নির্দেশনার বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার কালবেলাকে বলেন, ‘পুলিশের সব কার্যক্রম পিআরবি দ্বারা নির্ধারিত। পুলিশের কিছু বেসিক কাজ রয়েছে, যার মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, নিজস্ব স্থাপনা রক্ষা করারসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে। পুলিশ রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ তার নানা ব্যস্ততার কারণে বেসিক কাজগুলো অনেকসময় করতে পারে না। এটি এক ধরনের মহড়া, যেটিকে বলা হয় অ্যালার্ম প্যারেড। এখন ফ্রি টাইম রয়েছে, পলিটিক্যাল আনরেস্ট নেই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো আছে। তাই আমরা সবাইকে আপটুডেট রাখতে এ নির্দেশনা দিয়েছি।’



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার