বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের সুপারিশে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যামান আর্থিক প্রণোদনাসহ অ-আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এরই অংশ হিসেবে প্রবাসী রেমিট্যান্স উদ্বুদ্ধকরণে প্রবাসীর নিজ নামে অথবা তার অথোরাইজড বেনিফিশিয়ারি বরাবর একটি রেমিট্যান্স কার্ড প্রবর্তন করা যেতে পারে। ওই কার্ডে প্রবাসী কর্তৃক প্রেরিত রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা হিসেবে রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রদান করার কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। এ সুবিধা প্রবাসীদের বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রযোজ্য হারে (প্রতি এক হাজার টাকার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ০.৫/১/২ রিওয়ার্ড পয়েন্ট যোগ হতে পারে) রেমিট্যান্স কার্ড অথবা নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে রেমিট্যান্স কার্ড ইস্যু করা হবে এবং ব্যাংক থেকে একজন প্রবাসীর অথোরাইজড বেনিফিশিয়ারি রেমিট্যান্স কার্ড গ্রহণ করবেন।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।
জানা গেছে, রেমিট্যান্স কার্ডে অথবা ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রবাসীরা রিওয়ার্ড পয়েন্ট ব্যাংকের সাথে চুক্তি করা যেকোনো মার্চেন্ট শপে গিয়ে বেনিফিশিয়ারি রিডিম করতে পারবেন। বিভিন্ন সরকারি ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে রিওয়ার্ড পয়েন্ট রিডিম করা যেতে পারে। যেমন- জন্মনিবন্ধন ফি, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন/সংশোধন ফি, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট ফি, জমি/ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি, জমির খাজনা প্রদান, ইউটিলিটি বিল প্রদানের ক্ষেত্রে, সরকারি মেডিক্যাল হাসপাতালে বিল প্রদান, সরকারি স্কুল/কলেজের ফি প্রদান, প্রবাসী স্কিমের কিস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে এবং ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে তারা রিওয়ার্ড পয়েন্টের সুযোগ নিতে পারবেন।
সুপারিশে বলা হয়েছে, এগুলোর পাশাপাশি, বিদ্যমান সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করা যেতে পারে। যেমন- বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (অনিবাসী বাংলাদেশী) সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে, গৃহ নির্মাণ ঋণসুবিধা ৭৫:২৫ ডেট ইক্যুয়িটি রেশিও বৃদ্ধি করে ৮০:২০ রেশিও করা যেতে পারে, ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ মনে করে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে উৎসাহিত হবেন।
সূূত্র জানায়, প্রবাস আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের অ-আর্থিক সুবিধা দেয়ার বিষয়টি বর্তমানে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। প্রবাস আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত প্রায় তিন দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকার ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাস আয় এসেছে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের ৩৪.৩ শতাংশের সমপরিমাণ অংশই প্রবাস আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে।
প্রবাস আয় বৃদ্ধিতে গতি বাড়াতে ইতঃপূর্বে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে।