চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ‘বিজয়’ এর এক কর্মীকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের আরেক উপগ্রুপ ‘সিএফসি’র কর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ এক পক্ষের। এ নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আরও ৬ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে চবির অভ্যন্তরে ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের পাশেই এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর জখম হওয়া শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের সালাহ উদ্দিন। তাঁকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ও রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র হাতে আব্দুর রব হলের দিকে গেলে দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে সিএফসি উপগ্রুপের ৬ জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে চারটি রামদা উদ্ধার করার কথা জানিয়েছেন চবি কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে যান। বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতিতে রয়েছে এলাকাটি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিনে জানা যায়, হাটহাজারি উপজেলা নির্বাচনে বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এস এম রাশেদুল আলমের মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে ও সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমানের ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে অবস্থান নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দুটি কেন্দ্রের মধ্যে ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৫ জন।
এ বিষয়ে বিজয় গ্রুপের একাংশের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘কেন্দ্র আমাদের হলের (আলাওল হল) পাশে হওয়ায় তিনজন কেন্দ্রের ওদিকে যায়। গিয়ে দেখে আব্দুর রব হলের ১০০–১৫০ ছেলে এসে কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করে। এ সময় সালাহ উদ্দিন ওদের বলে ‘‘দেখ, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সেই হিসেবে আমাদের নির্বাচনের এখানে মাথা ঘামানোর দরকার নেই’’। এ রকম বলার পরই তাকে কুপিয়েছে।’
একই বিষয়ে আব্দুর রব হল সিএফসি গ্রুপের নেতা আহসান হাবিব সোপান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আমাদের কেন্দ্র থেকে অথবা নেতার কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে সালাহ উদ্দিনকে যারা কুপিয়েছে তারা ব্যক্তিগতভাবে ওখানে গেছে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি দোষীকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য।’
ভোটকেন্দ্রে থাকা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রে আছি। ভোট কেন্দ্রিক কোনো ঝামেলা এখানে হয়নি। ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে হল কেন্দ্রিক ঝামেলা হয়েছে। তারা আবার হলে চলে গেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. অহিদুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি বিশৃঙ্খলা থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। আহত ছেলেটিকে মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে চারটি রামদা উদ্ধারের কথা জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গলার ডান পাশে নিচের অংশে জখম হয়েছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাটহাজারী থানার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ছাত্রদের দুটি পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ছাত্র যদি মামলা করে তবে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।