দেশে উৎপাদিত পশুতে এবারও কুরবানির প্রস্তুতি রয়েছে। এজন্য ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল সরকার। চোরাইপথে যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এর পরও চোরাইপথে কিছু কিছু ঢুকছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
খামারিরা বলছেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার কুরবানি পশুর দাম গত বছরের তুলনায় অন্তত ১৫ ভাগ বেশি হতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা যুগান্তরকে বলেন, দেশে উৎপাদিত পশুতে এবার কুরবানির চাহিদা পূরণ হবে। সবশেষ হিসাব মতে, দেশে এবার মজুত আছে এক কোটি ২১ লাখ পশু। গত বছর সারা দেশে কুরবানি হয়েছিল ৯১ লাখ। এবার এক কোটি বা কিছু কম-বেশি হতে পারে। সে হিসাবে যা মজুত আছে তা দিয়েই ভালোভাবে কুরবানি হবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে আগে কুরবানি উপলক্ষ্যে অনেক পশু আসত। সে সময় দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এজন্য সরকার দেশে কাজটিকে উৎসাহিত করেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের পশুতেই কুরবানি হচ্ছে। এখন আমদানির ব্যাপারে আমরা কঠোর। কেননা, এ সময় আমদানি করলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে চোরাইপথে ঢোকার খবর মিলছে। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এ বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে এবার গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়ার কোনো সংকট নেই। ফলে আমদানিরও প্রয়োজন হবে না। তবে খামারি-ব্যবসায়ীরাও বলছেন, এবার দাম কিছুটা চড়া থাকবে। কারণ গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খামারি ও পশু ব্যবসায়ীদের মতে গত ছয় মাস আগে গো-খাদ্যের যে দাম ছিল, তা এখন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম।
জানা গেছে, গত বছর কুরবানিতে পশুর সরবরাহ ছিল এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। সেখানে গরু-মহিষ ছিল ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ছিল ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ও অন্যান্য পশু ছিল চার হাজার ৭৬৫টি। সবশেষ হিসাব মতে, এবার দেশের মজুত আছে এক কোটি ২১ লাখ।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গবাদিপশু ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা। সে হিসাবে ১০০ কেজি মাংস হবে এমন গরুর দাম পড়বে ৭০ হাজার টাকা। এর কমে কোনো গরু পাওয়া যাবে না। আর কুরবানি হাটে গরুর চাহিদা বাড়বে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে কেজিপ্রতি দাম ৮০০ টাকাও উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি দামে গরু কিনতে হতে পারে। তবে আমার ধারণা গরুর দাম চড়া থাকলেও কেজিপ্রতি মাংস ৭০০ টাকার মধ্যে থাকবে; এর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা না।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শাহ এমরান যুগান্তরকে বলেন, দেশে ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা ১৮ হাজার। এসব ফার্মে পশু মজুত রয়েছে প্রায় তিন লাখ। ফার্ম এবং গৃহস্থিসহ এবার দেশে কুরবানি উপযোগী পশু রয়েছে প্রায় এক কোটির বেশি। এতে কুরবানির চাহিদা পূরণ হবে। তবে এবার দাম অন্তত ১৫ ভাগ বেশি হবে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনার ফলে দেশে পশু পালন বেড়েছে। যে কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিদেশ থেকে আমদানি ছাড়াই কুরবানি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এবারও সেটা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে এবার কুরবানির দাম বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে এখন কুরবানি টার্গেট করে পশু পালন হচ্ছে। এজন্য গরু মাংসের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। হোটেল ব্যবসায়ীরা এত দামে মাংস কিনে ব্যবসা করতে না পারায় ভারত থেকে চোরাইপথে আসা মাংসের ওপর নির্ভর করছেন। এ অবস্থায় সরকারকে এ খাতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে ভারত থেকে চোরাইপথে মাংস আমদানি।