আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে


, আপডেট করা হয়েছে : 29-05-2024

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া নিশ্চিত হয়েছে

৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ডলার ছাড়ের বিষয়ে অবশেষে সবুজ সংকেত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)।


আগামী জুনে এই অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির সফররত প্রতিনিধিরা। গতকাল আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এতথ্য টিবিএসকে নিশ্চিত করেন।


তারা জানান, গতকাল আইএমএফ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে তৃতীয় কিস্তি নিশ্চিত করার জন্য চুক্তির বিভিন্ন দিক চূড়ান্ত করা হয়েছে।


এবছরের জুন নাগাদ দেশের নিট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ২০.১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ, ঋণদাতাটি এটা কমিয়ে ১৭-১৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনতে পারে বলেও জানান তাঁরা। 


ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য মার্চ শেষে ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার ও জুন শেষে ২ হাজার ১০ কোটি ডলার নিট রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত ছিল আইএমএফের। অর্থবিভাগের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। এ শর্ত পূরণ না হলেও তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে কোন সংশয় নেই।'


ওই কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফ এর সঙ্গে সরকারের উল্লেখ করার মতো কোন দ্বিমত নেই। ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব ও রিজার্ভ বাড়ানোসহ আইএমএফ যেসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে শর্তারোপ করছে, সরকারও সেগুলো বাস্তবায়নে করতে কাজ করছে।


তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে রিজার্ভের শর্ত চূড়ান্ত করবে আইএমএফ। একইসঙ্গে চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার জন্য আগামী অক্টোবর ও ডিসেম্বর নাগাদ নিট রিজার্ভের টার্গেটও নতুন করে নির্ধারণ করে দেবে।    


দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার আগেও নিট রিজার্ভের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। তখন আগামী মার্চ ও জুনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করে এমওইউ স্বাক্ষর করে আইএমএফ। 


অপর এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী জুন-ভিত্তিক রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্রাও অর্জন করা নিয়েও সংশয় রয়েছে সরকারের। "তাই জুনভিত্তিক রাজস্ব আদায়ে আইএমএফ এর লক্ষ্যমাত্রাতেও ছাড় চেয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। নতুন এমওইউতে (সমঝোতা স্মারকে) এক্ষেত্রেও ছাড় দিতে পারে সংস্থাটি।"


অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার বিপরীতে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা আদায় করেছে সরকার। তবে অর্থবছর শেষে আগামী জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে।


চলতি অর্থবছরের নয় মাসের রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি বিশ্লেষণ করে জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা কম হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।


আইএমএফের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে সরকার


পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, এবার আইএমএফ মোটাদাগে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে- তার মধ্যে রয়েছে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রাজস্ব আহরণ আরেকটু বাড়ানো ও সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে আনা। সরকারও আইএমএফ এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নীতি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।


''জুনভিত্তিক নিট রিজার্ভের শর্ত ২০.১০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৭-১৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে দিতে পারে আইএমএফ। তবে জুনের আগে এটি অর্জন করাও কঠিন হবে''- বলেন এই অর্থনীতিবিদ।

  

শর্তপূরণ নাহলে কী হবে


অর্থবিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মাহবুব আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে, সেগুলো পূরণ করতে সরকার কাজ করছে। "যদিও নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ হয়নি, তবুও তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।"


তিনি বলেন, আইএমএফ এর শর্ত সন্তোষজনকভাবে পূরণ করতে না পারলে আগামী অর্থবছরের দুটি কিস্তি পাওয়া কঠিন হবে। "কারণ, শর্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের হাতে আগামী অর্থবছর পর্যন্ত সময় রয়েছে। তাই কিস্তি ছাড়ের ক্ষেত্রে এখন বিভিন্ন শর্তে সরকারকে ছাড় দিলেও শেষ সময়ে কঠোর হতে পারে আইএমএফ।"  


''শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে একবার ছাড়া কখনও আইএমএফের ঋণের শেষ কিস্তি পায়নি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে আমি অর্থসচিব থাকার সময় আইএমএফ এর ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের শেষ কিস্তি পেয়েছিলাম। এর আগে বাংলাদেশ কখনও ঋণের শেষ কিস্তি নিতে পারেনি''- জানান তিনি।


আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠক করবে আইএমএফ


ঋণের তৃতীয় এবং চতুর্থ কিস্তির জন্য ব্যাংকিং খাতের শর্ত সামঞ্জস্য করতে আজ মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন আইএমএফের কর্মকর্তারা। 


একই দিন দুপুরে অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ও অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে সভা করে ঋণের তৃতীয় কিস্তি ও চতুর্থ কিস্তি ছাড় করার জন্য সংশোধিত শর্তগুলো (রিভাইজড টার্মস এন্ড কন্ডিশন) সংযুক্ত করে চূড়ান্ত করা সমঝোতা স্মারকে সম্মতি নেবে আইএমএফ।


এরপর ৮ মে প্রেস ব্রিফিং করে ঢাকা ছাড়বে আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো-ইকোনমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি।


ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা করতে গত ২৪ এপ্রিল ঢাকায় আসে এই প্রতিনিধি দল।


বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফের সাথে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে এই ঋণ ছাড় করা হবে।


গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফ ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের প্রথম কিস্তি ছাড় করে। আর ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করে।  



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার