ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনের বিইউ ৫৬ ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে দেহ খণ্ডাংশ উদ্ধারসহ মামলাটির তদন্ত কাজ শেষে ঢাকায় ফিরেছেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ ৩ কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় কলকাতা থেকে একটি ফ্লাইটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন।
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের স্বার্থে কলকাতায় গিয়েছিলে ডিবি পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে কয়েকদিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে আজ দেশে ফিরেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবির হারুন বলেন, কলকাতা থেকে প্রতিনিধিদলটি শতভাগ সফলতা নিয়েই দেশে ফিরছে।
হারুন বলেন, আমরা তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে কলকাতায় এসেছিলাম। আমরা যে মূল ঘাতককে গ্রেফতার করেছি, তার কাছে থেকে পাওয়া তথ্য আমরা মিলিয়ে নেওয়ার কাজ করেছি কলকাতায়। দ্বিতীয়ত, ভারতে যে গ্রেফতার জিহাদ... তার সঙ্গে আমাদের কাছে থাকা মূল ঘাতকের কথা মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এতে শতভাগ মিলেছে আমাদের কাছে গ্রেফতার মূল ঘাতক ও ভারতে গ্রেফতার জিহাদের কথা।
ডিবিপ্রধান বলেন, আমাদের আরও একটি বিষয় ছিল- সেটি হলো স্বচক্ষে ডিজিটাল এভিডেন্সগুলো মিলিয়ে দেখা। এমপি যার বাসায় ছিলেন, সেই গোপাল বাবুর সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। আমরা সিআইডিকে বলেছিলাম সেপটিক ট্যাংক ও কমোড ভেঙে দেখার জন্য। আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি কিন্তু সেপটিক ট্যাংক থেকে ভিকটিমের দেহের অনেক খণ্ডাংশ পেয়েছে। আমরা যে যে উদ্দেশ্য নিয়ে কলকাতায় এসেছিলাম, তার শতভাগ সফলতা নিয়ে আমরা বাংলাদেশে ফিরছি। আরও ভালো খবর আপনারা পাবেন।
বাংলাদেশের দুষ্কৃতকারীরা পশ্চিমবঙ্গকে কি একটি সেফজোন মনে করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, এবার কলকাতা আসার পর এখানকার পুলিশের সঙ্গে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের যে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, এতে করে বলতে পারি... বাংলাদেশ থেকে কেউ অপরাধ করে এসে কলকাতাকে স্বর্গীয় ভবন মনে করবে... তা অসম্ভব। আমরা আগামীতে তাদের আরও দ্রুত সময়ে কলকাতা থেকে ধরে নিয়ে যেতে পারব।
পলাতক আসামিদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, আরেকজন আসামি রয়েছে কাঠমান্ডুতে। আরেকজন আসামি রয়েছে আমেরিকায়, তিনি আমেরিকার নাগরিক। অভিযুক্ত সিয়ামের তথ্য চেয়ে আমরা ইতোমধ্যে নেপালকে জানিয়েছি। এই ঘটনা মূল যে অভিযুক্ত শাহীন সে কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছে। আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বলেছি, যেহেতু এখানে একটি মামলা হয়েছে, শাহীন এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত... তাকে যেন ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হয়।
হারুন আরও বলেন, শাহীনের বিষয়ে আমরা ইন্টারপোলে আবেদন করব। এ ছাড়া আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে এই বিষয়ে মৌখিকভাবে কথা বলেছি। এই বিষয়ে আমরা সরাসরিও কথা বলব।
দেহের খণ্ডাংশ পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, সেপটিক ট্যাংক থেকে দেহের যে খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে, আমরা ধারণা করছি এগুলো এমপি আনারের। তবে ডিএনএ টেস্ট ও ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়া এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। ডিএনএ টেস্টের জন্য ভিকটিম আনারের মেয়ে ভারতে আসবেন। ডরিনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি ভিসার জন্য আবেদন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বিভিন্ন খাল ও জলাভূমি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছেন সিআইডি, বিধাননগর কমিশনারেটের নিউটাউন থানার পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের ডুবুরি ও কর্মীরা। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আশাবাদ ব্যক্ত করে ডিবি হারুন বলেন, এই খুনের কিনারা হবে খুব দ্রুত এবং যা যা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এভিডেন্স আছে সেগুলো পর্যবেক্ষণে রেখেই তদন্ত চলবে।