সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) আসছে নতুন ৭ মেগা প্রকল্প। এসব বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে মেট্রোরেল লাইন-২, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং কনস্ট্রাকশন অব আউটার রিংরোড প্রকল্প।
আরও আছে ইমপ্রুভমেন্ট অব চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার, কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ, কনস্ট্রাকশন অব বে-টার্মিনাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট।
এসবসহ চলমান ও নতুন মিলে ৭৯টি প্রকল্প যুক্ত করা হচ্ছে আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) উন্নয়ন বাজেটে (এডিপি)। তবে দেশে পিপিপির অগ্রগতি এবং সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। সেক্ষেত্রে এসব প্রকল্প কতটা দ্রুত আলোর মুখ দেখবে বা কতটা সফলভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেসব নিয়েও শঙ্কা আছে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। যেমন : ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও তৈরি হচ্ছে পিপিপিতে।
কিন্তু যে সময়ে এবং যে ব্যয়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল, সেটি হয়নি। তাই এ প্রকল্প থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামী দিনে মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে সমীক্ষা যাতে সঠিকভাবে হয়, সে বিষয়টিও মনে রাখতে হবে। এসব ঠিকঠাকমতো না হলে পিপিপিতে নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলো শ্বেতহস্তীতে পরিণত হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, পিপিপির জন্য সরকার যথেষ্ট লজিস্টিক উন্নয়ন করেছে। যেমন পিপিপি আইন আছে, কর্তৃপক্ষ আছে, অফিস আছে এবং প্রয়োজনীয় জনবলও আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। এখনো উল্লেখযোগ্য সফল প্রকল্প বাস্তবায়নও হয়নি। এক্ষেত্রে পিপিপি কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও নির্ভরযোগ্য পার্টনার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বেসরকারি অংশ পেলেও সরকারের এবং তাদের কার কত অংশ হবে, এ নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। কারণ বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা চান কতটা সুবিধা সরকারের কাছ থেকে বের করে নেওয়া যায়। এ মানসিকতার ফলে অনেক ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত আর প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতে পারে না। তিনি আরও জানান, পিপিপির প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে। এখানে পরিকল্পনা কমিশনের খুব বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এডিপিতে যুক্ত হওয়া পিপিপি প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলোর কার্যক্রম বেশ এগিয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্প রয়েছে প্রকিউরমেন্ট (দরপত্র) পর্যায়ে। এছাড়া চুক্তি স্বাক্ষর-পরবর্তী শর্ত প্রতিপালনাধীন পর্যায় রয়েছে ৪টি, অপারেশনাল পর্যায়ে দুটি, বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে ২৫টি, চুক্তি স্বাক্ষর পর্যায়ে রয়েছে ছয়টি প্রকল্প। আরও আছে নীতিগত অনুমোদন-পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে নয়টি, নির্মাণাধীন পর্যায়ে আটটি এবং পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে ছয়টি প্রকল্প।
মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেল লাইন-২ রাজধানীর গাবতলী থেকে নিউমার্কেট-গুলিস্তান-কমলাপুর-সাইনবোর্ড হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর পর্যন্ত সম্ভাব্য মেইন লাইন তৈরি করা হবে। এরপর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ব্রাঞ্চ লাইন তৈরি করা হবে।
সব মিলিয়ে উড়াল ও পাতাল প্রায় ৩৫ কিলোমিটার মেট্রোরেল তৈরি হবে। ২৯ হাজার ৫৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে বর্তমানে বিস্তারিত সমীক্ষার কাজ চলছে।
ঢাকা ম্যাস রেপিড ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) লিমিটেড সূত্র জানায়, পিপিপির অর্থ খোঁজার পাশাপাশি এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে বৈদেশিক ঋণেরও চেষ্টা চলছে। ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর এটি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়। নীতিগত অনুমোদনের পর ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট প্রকল্পটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এটি নীতিগত অনুমোদন-পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কনস্ট্রাকশন অব আউটার রিংরোড প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৯৯৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটির বিস্তারিত সমীক্ষা চলছে।
ইমপ্রুভমেন্ট অব চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। এটির বিস্তারিত সমীক্ষা চলমান রয়েছে। কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে পরামর্শক নিয়োগ পর্যায়ে আছে। কনস্ট্রাকশন অব বে-টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এটির জন্য বিস্তারিত সমীক্ষা চলমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এটি নীতিগত অনুমোদন-পরবর্তী প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।