বাজেটে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ উত্তরণের পথরেখা নেই


, আপডেট করা হয়েছে : 09-06-2024

বাজেটে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ উত্তরণের পথরেখা নেই

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে বহু দেশ। এখনো সারাবিশ্বের বড় উদ্বেগ মূল্যস্ফীতি। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো আগ্রাসী ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সক্ষম হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটি এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।


বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রাক্কলন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়, এটি অর্জনের পথরেখাও বাজেটে দেওয়া হয়নি।


অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রত্যেকটি সূচকে ক্ষত রয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য অস্বস্তিকর অবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে— উচ্চমূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আহরণে নিম্নগতি, ব্যয় ব্যবস্থাপনায় সংকট, ব্যাংকিং খাতের দুরাবস্থা, রফতানিতে নিম্নপ্রবৃদ্ধি, আমদানি নেতিবাচক, বিনিয়োগ স্থবির, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এবং মুদ্রার বিনিময় হারে বারবার পরিবর্তন হচ্ছে। এর সবকিছুই মানুষের উপর প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট সে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কমানো দূরের কথা, উল্টো মূল্যস্ফীতি উস্কে দেওয়া হয়েছে।


বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে যে পথরেখা দরকার তা দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী।


এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। টানা ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকা (এমসিসিআই) মনে করে, মূল্যস্ফীতির এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়।


২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। আইসিএবির সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীণ বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির দিক থেকে, দেশের মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি, যা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ইঙ্গিত। মোট বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থায়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে।


বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু গত দুই বছর মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে। এ অবস্থায় আগামী ১২ মাসে সেটি কমে কীভাবে সাড়ে ৬ শতাংশ হবে, সেটি বোধগম্য নয়। ফলে এটি অবাস্তব লক্ষ্য। বহির্খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটিও উচ্চাভিলাসী।


সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজেটে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলো মূল্যস্ফীতি কমানো দূরে থাক, বরং উস্কেও দিতে পারে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও বড় চাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ বাজেটে বিভিন্ন সেবার ওপর কর বসেছে যেগুলো পেতে মানুষকে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে বছরে চার বার মূল্যবৃদ্ধি হবে। সে কারণে সেবার ব্যয় বাড়বে। আবার যেসব খাতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে তার সুবিধা আমদানিকারকদের পকেটে যাবে। এগুলোর সুফল সাধারণ মানুষ পায় না।


বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আরও ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। সে লক্ষ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, সরকার নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। ভর্তুকির পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যেও পণ্য বেচবো। ট্রাক সেলের পাশাপাশি স্থায়ী দোকানের ব্যবস্থা করছি। এই ব্যবস্থা সম্পন্ন হলে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যের পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যেও পণ্য বিক্রি করা হবে। এতে করে ভোক্তারা উপকৃত হবেন।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার