সেন্ট ভিনসেন্টে তবে বাংলাদেশ-নেপালের ঘূর্ণি-যুদ্ধ


, আপডেট করা হয়েছে : 16-06-2024

সেন্ট ভিনসেন্টে তবে বাংলাদেশ-নেপালের ঘূর্ণি-যুদ্ধ

দক্ষিণ আফ্রিকা কি আর্নস ভেলের উইকেট পড়তে ভুল করেছিল? নেপালের বিপক্ষে প্রোটিয়ারা একাদশ সাজাল চার ফাস্ট বোলার দিয়ে। আগেই সুপার এইট নিশ্চিত হওয়ায় কেশব মহারাজকে এ ম্যাচে খেলানোর প্রয়োজন মনে করেনি দক্ষিণ আফ্রিকান টিম ম্যানেজমেন্ট।


প্রোটিয়াদের একাদশে জায়গা পান লেগ স্পিনার তাবরিজ শামসি—সাইড বেঞ্চ থেকে যিনি কিনা প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টের ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন এ রাতে। ওই এক শামসিই থামিয়ে দিয়েছেন নেপালি রূপকথা। ১১৬ রানের ছোট লক্ষ্য দিয়ে মন্থর-স্পিনসহায়ক উইকেটে দলের প্রোটিয়া ফাস্ট বোলারদের কাজ ছিল নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুধু নেপালি ব্যাটারদের ওপর চাপ বাড়ানো। আর সেই সুযোগে শামসি করবেন একের পর এক শিকার। দুটিতেই তাঁরা সফল হয়েছেন বলেই শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে ১ রানের জয়।


কিন্তু তার আগে নেপালের বোলাররা যা করেছেন, সেটিও কম প্রশংসনীয় নয়; বিশেষ করে তাঁদের দুই লেগ স্পিনার সন্দীপ লামিচানে আর কুশল ভুর্টেল। নানা বাধাবিপত্তি, কাঠখড় পুড়িয়ে লামিচানে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই। ৪ ওভার বোলিং করে উইকেট পাননি, ১৮ রান দিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ওপর যে চাপ তৈরি করেছেন, সেটির সুফল পেলেন ভুর্টেল। তাঁর ঝুলিতে উইকেট ৪টি। নেপালি স্পিনাররা ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত টার্ন পেয়েছেন আর্নস ভেলের উইকেটে।


নেপাল-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে দুই দলের তিন লেগ স্পিনার যে ভেলকিটা দেখিয়েছেন, নিশ্চিত আবারও চোখ চকচক করে উঠেছে রিশাদ হোসেনের। সাকিব আল হাসান যথার্থই বলেছেন, এই বিশ্বকাপে রিশাদের অন্তর্ভুক্তিটা ছিল দুর্দান্ত এক সিদ্ধান্ত। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে দুটি ম্যাচ জিতেছে, দুটিতেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তরুণ লেগ স্পিনারের।


ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যা করেছিলেন, সেন্ট ভিনসেন্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যেন একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন রিশাদ। ডেথ ওভারের আগে হুট করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজটা এই লেগ স্পিনারই করছেন। নিজের বোলিং নিয়ে রিশাদ নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পর বলছিলেন, ‘দলে অবদান রাখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবার শরীরী ভাষা এবং প্রচেষ্টা ছিল, সেটা অনেক ভালো লেগেছে। ইনশা আল্লাহ, চেষ্টা করব আরও কীভাবে উন্নতি করা যায়। চিন্তা করেছি, এখান থেকে একটা-দুইটা উইকেট নিলে খেলাটা আবার আমাদের দিকে চলে আসবে। আমি শুধু এটা করার চেষ্টা করেছি।’


সেদিন ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে রিশাদই বলছিলেন, জোরে বল করলে এই উইকেটে ভালো টার্ন মেলে। কালও তাঁর ঘূর্ণিজাদু দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। দলে একজন লেগ স্পিনারের হাপিত্যেশ বাংলাদেশের বহু পুরোনো। রিশাদকে দিয়ে সেই হাহাকার দূর করার এক দারুণ প্রচেষ্টা চন্ডিকা হাথুরুসিংহের। হ্যাঁ, হাথুরুসিংহের কথা বিশেষ করে বলা এ কারণে, আগের মেয়াদেও তিনি হন্যে হয়ে একজন লেগ স্পিনার খুঁজেছিলেন।


জুবায়ের হোসেন লিখনের আবির্ভাব এবং হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানা থাকার পর হাথুরু এবারও একই চেষ্টা করেছেন এসেই। রিশাদকে দিয়ে সেই শূন্যতা দূর করার এ চেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল। রিশাদ নিয়মিত আস্থার প্রতিদান দিয়ে রিস্ট স্পিনে বাংলাদেশের আশাটা আরও বড় করছেন। ভালো খেলোয়াড় তৈরি করতে সামনে একজন ‘হিরো’ থাকতে হয়। ধারাবাহিক ভালো করলে রিশাদ নিশ্চিত অনেক ক্রিকেটারকে ভবিষ্যতে লেগ স্পিনার হওয়ার স্বপ্ন দেখাবেন।


রিশাদের পারফর‍ম্যান্স প্রশংসনীয় হলেও স্পিন বিভাগের নেতা সাকিবের ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও জ্বলে ওঠার সময় হয়েছে। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত উইকেটশূন্য বাঁহাতি অলরাউন্ডার। কাল নেপালের বিপক্ষে সুপার এইটে ওঠার ম্যাচে সেন্ট ভিনসেন্টের কন্ডিশনে সম্ভাব্য ঘূর্ণি লড়াইয়ে সাকিবের জ্বলে ওঠা খুব জরুরি হয়ে গেছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার