ঈদের বিরতির পর জমজমাট রহনপুর আমবাজার


, আপডেট করা হয়েছে : 22-06-2024

ঈদের বিরতির পর জমজমাট রহনপুর আমবাজার

দেশে আম উৎপাদন ও বিপণনে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা। আর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তর আমবাজার হচ্ছে রহনপুর। রহনপুর রেলস্টেশনের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ আমবাজারের ঐতিহ্য বহুদিনের। দেশের বিভিন্ন স্হানে বর্তমান সময়ে আম উৎপাদন হলেও দীর্ঘ সময় ধরে চাঁপাইনবাবগন্জ জেলা আম উৎপাদনে শীর্ষ স্হানে রয়েছে। চাঁপাইনবাবগন্জের রহনপুরে নানান পদের বাহারী নামের আম পাওয়া যাচ্ছে।


চলতি জুন মাসের ১ম সপ্তাহে মৌসুম শুরু হলেও এখন মধ্য সময়ে বাজারে লক্ষণভোগ, বি খিরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়া, ফজলী, আম্রপালী আম বাজারে দেখা যাচ্ছে। মৌসুমের শেষ দিকে আশ্বিনা আমের দেখা মিলবে। এছাড়া আর কয়দিন পর বারী ফোর ও এগার, কাটিমনসহ নানান জাতের বারোমাসি আম বাজারে পাওয়া যাবে। থাকবে একেবারে আগস্টের শেষ অবধি। এর মধ্যে কয়েক জাত যেমন কাটিমন, বারী- ১১, বারী- ৪ আম প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়।


তবে এবার আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে আম উৎপাদন কম। ফলে দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। গোপালভোগ প্রায় শেষের দিকে। এখন বাজারে হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ অন্যান্য আম রয়েছে। গোপালভোগ দাম গিয়ে ঠেকেছে ৪৫০০ টাকা মণ দরে। হিমসাগর, ল্যাংড়া মিলছে ৩৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা মণ দরে। বিভিন্ন জাতের গুটিআম পাওয়া যাচ্ছে ২০০০ থেকে ৩০০০ এর মধ্যে। লক্ষ্মণভোগ ২০০০ থেকে শুরু হয়ে ৩০০০ টাকা গিয়ে ঠেকেছে। আম্রপালী ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আরো বিভিন্ন জাতের আম প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। রহনপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন আমবাজারে প্রায় শতাধিক আড়ত গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক ও কুরিয়ার যোগে আম দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে। প্রকৃত আম ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মৌসুমী আম ব্যবসায়ীরাও আম বিপণনে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও আমবাজারকেন্দ্রিক প্রায় সহস্রাধিক লোক প্রতিদিন কর্মরত থাকে।


আম আড়তদার আবুল কাশেম বলেন, আম উৎপাদন কম হওয়ায় আমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে আম ব্যবসায়ী, আম বেপারী এসে রহনপুরে আস্তানা গেড়েছেন। প্রতিদিন আম ক্রয় করে পাঠাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। আম উৎপাদন কম হলেও দাম বেশি হওয়ায় এবার আম ব্যবসায়ীরা লাভের আশা করছে। আমার এখান থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে আম নিয়ে যায়।


খুচরা আম ব্যবসায়ী কমল বলেন, আমের ব্যবসা ভালোই চলছে। যে সকল ক্রেতা ১০ কেজি, ২০ কেজি করে আম বিভিন্নজনকে উপহার দেওয়ার জন্য ক্রয় করেন তাদের জন্য আমরা অর্থাৎ খুচরা ব্যবসায়ীরা রয়েছি। আমরা যত্ন করে আমের ক্রেতাকে আম প্যাকেটজাত করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিই।


আমের মৌসুম আসলেই এলাকার ছাত্র, যুবক, তরুণেরা অনলাইনে আম বেচাকেনায় জড়িয়ে পড়ে।


এবার প্রায় ৬০ জন অনলাইনে আম বিক্রয় করার জন্য নির্দিষ্ট পেজ খুলেছেন। একেকজন একেক নাম দিয়ে পেজ খুলে গ্রাহকের সাথে কথা বলে নিচ্ছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় আম তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছেন।


এ প্রসঙ্গে কথা হয় চাঁপাই পিউর ম্যাঙ্গোর স্বত্বাধিকারী ওবায়দুল্লাহ দুলালের সাথে। তিনি বলেন, আমের উৎপাদন কম হওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার অনেক কম আম বিক্রয় হচ্ছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় গতবারের চেয়ে কিছু কম হলেও লাভ হবে।


অনলাইনের চাঁপাই ম্যাংগো ভিলার নাজমুল হক জানান, আমের ব্যবসা মোটামুটি হচ্ছে। তবে দাম সহনীয় পর্যায়ে হলে আরো বেশি করে বিক্রয় করতে পারতাম। আমরা দুতিন বন্ধু মিলে আমের ব্যবসা করছি।


আমের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা হয় গোমস্তাপুর উপজেলা আমচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেবের সাথে। তিনি বলেন, প্রকৃতির বিরূপ আবহাওয়ার ফলে আমের উৎপাদন কম। তবে গত দু-তিন বছর আমের উৎপাদন ভালো হয়েছিল কিন্তু আমের দাম না থাকায় আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো লাভের মুখ দেখতে পায়নি। কিন্তু এবার আমের দাম ভালো থাকায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভের আশা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমের শেষ পর্যন্ত আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা তাদের কষ্টের ফল বাসায় নিয়ে যেতে পারবে।


রহনপুর আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, রহনপুরের প্রায় শতাধিক আম আড়তদার এখন আম ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন তারা রহনপুরের বাজার থেকে আম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক আম পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।


আম পরিবহনের জন্য গত ১০ জুন থেকে চালু হয়েছে রহনপুর থেকে চাঁপাইনবাবগন্জ, রাজশাহী হয়ে ঢাকাগামী ম্যাংগো ট্রেন। আম পরিবহনে কেজিতে ২ টাকার কম লাগলেও আমব্যবসায়ীরা ট্রেনে আম পাঠাতে আগ্রহী নন। প্রথম দিনে প্রায় ১০০০ কেজি আম গেলেও দ্বিতীয় দিনে কমে যায়।


এ প্রসঙ্গে কথা হয় রহনপুর স্টেশন মাস্টার শহীদুল ইসলাম বলেন, এত কম টাকায় আম পরিবহনের সুযোগ থাকার পরেও কেন যে আম যাচ্ছে না এটা বুঝতে পারছি না। তবে তিনি বলেন ভোর ৬ টায় রহনপুর থেকে খুলনাগামী ট্রেন মহানন্দা এক্সপ্রেসে (বেসরকারি মালিকানায় চলে) প্রায় ৬০০/৭০০ ক্যারেট অর্থাৎ ১২০০০/১৪০০০ কেজি আম পরিবহন হচ্ছে।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, এবার উপজেলায় ৪ হাজার ২’শ ৩০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয়েছে। এবছর প্রায় ৮৫% আমের মুকুল হয়েছে। এবছর শীতের প্রকোপ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া ও কুয়াশাচ্ছন্নের কারণে মুকুল কম এসেছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রতি বছরের ন্যায় আমের ভালো ফলনের জন্য সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করার জন্য আমচাষিদের সাথে কথা বলেছি এবং পরামর্শ দিয়েছি। গত বছরের ন্যায় রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এবার গোমস্তাপুর উপজেলার ৩৯ জন আমচাষির আম রপ্তানিযোগ্য করার লক্ষ্যে উপকরণ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার