শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস


, আপডেট করা হয়েছে : 02-07-2024

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ এবং কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের সূচনা করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 


সোমবার মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। কোটা বাতিল করে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চার দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী। তারা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সোমবার বিক্ষোভ দেখিয়ে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।


জাবিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালের পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)। 


এছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিফাত রশিদ বলেন, আমরা মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় গণপদযাত্রা করব। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।


প্রসঙ্গত, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ৫ জুন বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। 



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: কোটা বাতিল করে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ক্যাম্পাসে সোমবার বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী। দুপুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কলাভবন, মল চত্বর, ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘১৮’র হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্নোগান দিতে থাকেন।


অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, বর্তমানে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটার পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও গলাকাটা পোষ্য কোটা দেওয়া হয়েছে। এই পোষ্য কোটার ফলে কর্মচারী শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। একটি পরিবারের একজন যেখানে চাকরিতে রয়েছেন, সেখানে অন্যদেরও সেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমার, আপনার বাবা-মা যারা শ্রমজীবী, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ তাদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, স্বাধীন এই বাংলায় কোটা বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক, নির্যাতনমূলক কোটা ব্যবস্থার কবর দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে আপামর ছাত্র জনতার কথা বিবেচনা করে কোটা বাতিল করেছিলেন, সেখানে হাইকোর্ট থেকে কিভাবে সেই পরিপত্র আবার বাতিল করা হয়? আজকে সারা দেশের ছাত্রসমাজ একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল করার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার