সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ (শনিবার) তারা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করবেন। কাল (রোববার) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালন করবেন। শুক্রবারও কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন এবং অনলাইনে কোটাবিরোধী প্রচারণা চালান শিক্ষার্থীরা।
এর আগে দুদফায় সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। কোটাব্যবস্থা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদাদল। শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ সমর্থন জানায়।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা আজ (শুক্রবার) অনলাইনে কোটাবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছি। এছাড়া আন্দোলনের হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিভিন্ন আবাসিক হল এবং বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগদানের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বোঝানো হয়েছে। শনিবার (আজ) বিকাল ৩টায় আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ সমাবেশ করব।
সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সর্বাÍক ছাত্র ধর্মঘটে আমরা ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৪৭টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্দোলনে সাদাদলের সমর্থন : সাদাদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা সরকারি পরিপত্রের অংশবিশেষ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনগ্রসর ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সমাজে এগিয়ে আনার জন্য কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যখন সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা চালু হয় তখন দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার, চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা কোটাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে সে আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরি (নবম-ত্রয়োদশ গ্রেড) থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে। কিন্তু গত ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগ আপাতত এ রায় বহাল রাখেন। ২০১৮ সালের পরিপত্রের অংশবিশেষ বাতিল করে দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে পুনরায় চাকরিপ্রত্যাশী এবং শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছেন, আমরা মনে করি তা ন্যায্য ও যৌক্তিক। কারণ কোটা কখনোই মেধার বিকল্প হতে পারে না।