বরেন্দ্রর প্রকল্প প্রস্তাবেই আট ত্রুটি


, আপডেট করা হয়েছে : 01-07-2022

বরেন্দ্রর প্রকল্প প্রস্তাবেই আট ত্রুটি

পদ্মা থেকে পানি এনে সেচ কার্যক্রম করা হবে বরেন্দ্র অঞ্চলে। এর মাধ্যমে ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে দেওয়া হবে সেচ সুবিধা। কিন্তু এ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাবেই ৮ ধরনের ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

এর মধ্যে বিদেশ সফরের জন্য ৯৬ লাখ টাকার প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে কমিশন। এছাড়া বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়েও তোলা হয়েছে প্রশ্ন।

‘ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদীর পানি উঁচু বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাবে উঠে এসেছে এসব বিষয়। এটি সংশোধনের জন্য ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৫৬৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, প্রকল্পের গোড়াতেই যদি ভুল থাকে, তাহলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে তার মাশুল দিতে হয়। এজন্য পরবর্তীকালে মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য পরিকল্পনা কমিশন অনেকটা সতর্ক রয়েছে। তারপরও আরও ভালোভাবে দেখা উচিত।

প্রকল্পটির দায়িত্বে রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা বেগম বৃহস্পতিবার বলেন, বিদেশ সফরের প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ত্রুটিগুলো সংশোধনের জন্য প্রকল্পের ডিপিপি কৃষি মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় পদ্মা নদী থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ৩৫ মিটার উঁচু বরেন্দ্র এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য খালে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় মজা খাল পুনর্খননের মাধ্যমে খালের পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। সেই সঙ্গে ভূ-উপরিস্থিত পানি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির রিচার্জ বাড়ানো হবে।

অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী, তানোর ও পবা উপজেলায়।

পিইসি সভার কার্যপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্পের আওতায় কৃষক প্রশিক্ষণ বাবদ ১১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৯৬ লাখ টাকা, ব্যবস্থাপনা খাতে ৩৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং পরামর্শক ব্যয় বাবদ ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব খাতে ব্যয় প্রাক্কলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ও বরাদ্দ কৃষি মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে বলে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ও চাহিদার মধ্যে ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ২৬৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঘাটতি আছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির অর্থনৈতিক এবং আর্থিক (ইআইআরআর, এনপিভি ও বিসিআর) হিসাব সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়নি।

প্রকল্পের আওতায় ইনটেক পাম্প ক্রয়, সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প কেনাসহ বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে বিস্তারিত ব্যয়বিভাজন ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৯নং অনুচ্ছেদে দেখানো হয়নি। প্রতিটি আইটেমের ব্যয়বিভাজন ও ডিজাইন ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে। এছাড়া ডিপিপির ২২নং অনুচ্ছেদে প্রধান প্রধান আইটেমের স্পেসিফিকেশন বা ডিজাইনের বর্ণনা সংযুক্ত করা প্রয়োজন।

কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, পানি উত্তোলনের জন্য পদ্মা নদী তীরবর্তী স্থানে ইনটেক পাম্প স্টেশন বসানোর জন্য ৪০০ শতক জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৭০০ শতক জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

কিন্তু ডিপিপিতে ৪০০ শতক জমির জন্য বরাদ্দ ধরা আছে ৩ কোটি ২ লাখ টাকা। এছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয় পিইসি সভায়।

প্রকল্পটির প্রস্তাবে আরও যেসব ত্রুটি আছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেগুলো হলো-প্রকল্পের আওতায় ৫টি জিপ গাড়ি ভাড়া বাবদ ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ ২৪ লাখ টাকা এবং পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ৬৩ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু আউটসোর্সিং করা সত্ত্বেও কেন মেরামত, সংরক্ষণ ও জ্বালানি খাতে টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে-এ বিষয়টি সুস্পষ্ট নয় বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের পদ/জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সভায় একটি পরিবহণ সেবার সুপারিশ করা সত্ত্বেও ৫টি গাড়ি কীভাবে ভাড়া হবে বোধগম্য নয়। প্রকল্পের আওতায় ১০টি কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে।

কালভার্ট নির্মাণের যৌক্তিকতাসহ এর ডিজাইন ও বিস্তারিত ব্যয় প্রাক্কলন ডিপিপিতে সংযোজন করা হয়নি। এটি সংযোজন করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্পের প্রতিটি আইটেমের পরিমাণ ও ব্যয় পর্যালোচনা করে যুক্তিযুক্ত করা যেতে পারে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। 


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার