সবুজ কারখানার সনদপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড


, আপডেট করা হয়েছে : 13-07-2024

সবুজ কারখানার সনদপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড

গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ গার্মেন্টস কারখানায় নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। নতুন করে সবুজ কারখানার সনদ পেল আরো ৪টি গার্মেন্টস- যা দেশের টেকসই শিল্প প্রবৃদ্ধিতে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এতে বাংলাদেশে পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানার সংখ্যা দাঁড়াল ২২৪টি। এর মধ্যে ৮৮টি প্লাটিনাম, ১২২ গোল্ড এবং বাকিগুলো সিলভার। আর নতুন এ কারখানাসহ বিশ্বসেরা ১০০টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৫৯টিই বাংলাদেশের। ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) এ স্বীকৃতি দিয়েছে।


গতকাল বৃহস্পতিবার বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এ তথ?্য জানানো হয়। নতুন সবুজ কারখানার সনদ পাওয়া কারখানাগুলো হলো- অনন্ত জিন্সওয়্যার লিমিটেড, বিগ বস করপোরেশন লিমিটেড, বেসিক শার্ট লিমিটেড ও অ্যাপটেক ক্যাশওয়ার। এর মধ্যে অনন্ত জিন্সওয়্যার লিমিটেড ৯০ পয়েন্ট, বিগ বস করপোরেশন লিমিটেড ৮৮ পয়েন্ট, অ্যাপটেক ক্যাশওয়্যার ৮৬ পয়েন্ট এবং বেসিক শার্টস লিমিটেড ৯০ পয়েন্ট নিয়ে প্লাটিনাম রেটিং পেয়েছে। পোশাক শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, সবুজ কারখানা পোশাক খাতের রপ্তানি বাড়াতে বড় অবদান রাখছে।


সবুজ কারখানার স্বীকৃতির বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এ মাইলফলক সবুজ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরবে।


পরিবেশগত স্থায়িত্ব, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট শিল্পের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা উভয় ক্ষেত্রেই অবদান রাখবে। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গ্রিন ফ্যাক্টরি নিয়ে বর্তমানে যে সচেতনতা বা অর্জন, এ বীজ বপন করা হয়েছিল অনেক আগে। সেই প্রচেষ্টার ফল আমরা এখন পাচ্ছি। চলমান অর্থনৈতিক খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে এটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। মেশিন সবার কাছে আছে, মানুষও সবার কাছে। কিন্তু কে কী ভ্যালু অ্যাড করল আগামী দিনে সেটিই আসলে সামনে ভূমিকা রাখবে।


এ পরিচালক আরো বলেন, আপাতদৃষ্টিতে যদি মনে হয়েও থাকে আমরা এ খাতে বেশি বিনিয়োগ করছি, ভবিষ্যতে কিন্তু সেটি কমে আসবে। পরিবেশগতভাবেও আমরা উপকৃত হব। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যদি আমরা প্রতিযোগিতা করে চলতে চাই, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলে হলে আমাদের এ ধরনের ভ্যালু অ্যাড করেই চলতে হবে।


তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের মধ্যে পরিবেশ-সচেতন পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ এলইইডি সনদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে সেই লড়াইয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ শুধু পরিবেশ রক্ষাই করছে না, তারা বিশ্বব্যাপী দায়িত্বশীল খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করছে। মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, শক্তিশালী ব্র্যান্ডের খ্যাতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।


বিনিয়োগ আকর্ষণ করে পোশাক খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সফলতা লাভ করছে। ফলে এটি আমাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দিচ্ছে।


যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন বা লিড সনদ দেয়। সংস্থাটি বাণিজ্যিক ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িসহ অন্য স্থাপনার ক্ষেত্রেও সনদ দেয়। তবে শিল্প কারখানার ভবন নির্মাণ থেকে পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত সব পর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে সর্বোচ্চ মানের কারখানাকে এ সনদ দেয় তারা।


উল্লেখ্য, ২০১২ সালে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে প্রথম পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার যাত্রা শুরু হয় দেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে স্থাপিত কারখানাটি হলো ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা।


বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন স্থায়িত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি হ্রাস এবং দক্ষতার ক্রমবর্ধমান সমস্যাগুলো মোকাবিলা করে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। সবুজ পোশাক কারখানার ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বাংলাদেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবুজ চুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসা উভয়ের দ্বারা বর্ণিত যথাযথ পরিশ্রমের নির্দেশাবলীর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য একটি সুবিধাজনক জায়গা দেবে।


রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর সবুজ কারখানায় রেকর্ড হওয়া বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছে। ২০১৩ সালের ওই ঘটনায় ১ হাজার ১৩৪ জনের মৃত্যু ও ২ হজারের বেশি আহত হয়েছিলেন।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার