কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজে ফান্ড গঠন ৩১ রেলকর্মীর


, আপডেট করা হয়েছে : 13-07-2024

কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজে ফান্ড গঠন ৩১ রেলকর্মীর

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘ ১ বছর পর শুরু হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে এতদিন বড় ধরনের অভিযান না হলেও সম্প্রতি বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা যোগ দেওয়ার পর কাল রোববার থেকে অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসার অবৈধ সম্প্রসারণ উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হতেই বিভিন্ন দপ্তরে তদবির শুরু করেছেন ৩১ রেলকর্মী। উচ্ছেদ ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করতে ‘ফান্ড’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


প্রথমদিকে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাগে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে দিতে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৪ জুলাই রোববার থেকে অভিযান শুরুর কথা রয়েছে।


জানা গেছে, ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীতে ৪টি এবং ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদার ও স্থাপনা সরাতে উচ্ছেদ অভিযানের দিনক্ষণ ঠিক করেছিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে সে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। গত প্রায় এক বছর বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় রেলওয়ের বড় ধরনের উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। মার্চে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা যোগ দেওয়ায় উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর পথ খুলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৮তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৮ জুলাই এই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। অভিযানে নগরীর পাঁচলাইশ, আকবরশাহ, কোতোয়ালি ও খুলশী থানায় রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়গুলো বা ভূমিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে বসবাসরত পরিবারকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে সরিয়ে দেওয়া হবে।


রেলওয়ের পক্ষ থেকে কর্মসূচিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করতে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের জন্য সিএমপি কমিশনারের কাছেও চিঠি দেওয়া হয়।


রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সাড়ে ২১ হাজার একর জমির মধ্যে রেলওয়ের অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ১৩ হাজার ৭৮৯ দশমিক ৫০ একর জমি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু জমি একাধিক ব্যক্তিকে লিজ দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২৮৫ দশমিক ৪৪৭ একর জমি (পুকুর ও জলাশয়) মৎস্য চাষের জন্য, ৪৪ দশমিক ৯৩ একর নার্সারির জন্য এবং অন্যান্য কাজে ৮৬৫ দশমিক ৪৩২৯ একর রেলভূমি লিজ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের হাতে পূর্বাঞ্চলের ৭১৮ একর জমি রয়েছে। দখল হওয়া জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা, বস্তি, মার্কেট, রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ও ক্লাবসহ নানা স্থাপনা। অপরদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগে জমির পরিমাণ ৭ হাজার ৭০১ একর। দখল হয়ে আছে ২১৬ একর। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৪ হাজার ৬৫৪ দশমিক ৪৩ একর। যার মধ্যে ১৮৩ দশমিক ২৩ একর বেদখল।


এদিকে নির্দেশনা দেওয়ার ১০ মাস পর নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারসংলগ্ন এলাকায় রেলওয়ে কর্মচারীদের বাসা-বাড়িতে গড়ে তোলা অবৈধ সম্প্রসারণ উচ্ছেদ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরুর খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্মীরা বৃহস্পতিবার বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে ডিআরএমের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় রোববার তারা রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতাদের নিয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। এছাড়া শ্রমিক লীগের নেতা এবং রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করতে ৩১ রেলওয়ে কর্মচারী একটি ফান্ড গঠন করছেন। উচ্ছেদ ঠেকাতে প্রাথমিকভাবে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলা হয়েছে। এই কাজের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন মো. কামরুল ইসলাম নামের একজন। তিনি ডিএমই/লোকো/পাহাড়তলীর আওতাধীন এলএম-২ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘বিভাগীয় কর্মকর্তা না থাকায় প্রায় এক বছর ধরে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যায়নি। এখন সেই সংকট নেই। প্রয়োজন হলেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানানো হলে রেল কর্মচারীদের অবৈধ সম্প্রসারণও উচ্ছেদ করা হবে।’



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার