ডিবি কার্যালয়ে ৬ সমন্বয়ককে নির্যাতনের অভিযোগ


, আপডেট করা হয়েছে : 02-08-2024

ডিবি কার্যালয়ে ৬ সমন্বয়ককে নির্যাতনের অভিযোগ

অবশেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে ছাড়া পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। তারা হলেন-নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম। ছাড়া পাওয়ার পর সমন্বয়ক ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ডিবি কার্যালয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতনের মুখেই তারা ২৮ জুলাই তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

পরে তারা টানা ৩২ ঘণ্টা অনশনে যান। অনশনরত অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের ডেকে নেওয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। পরে ছয় পরিবারের সদস্যদের জন্য পৃথক ছয়টি গাড়ির ব্যবস্থা করে ডিবি। ওইসব গাড়িতে সমন্বয়কদের বাসাবাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

সমন্বয়কদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকেরকে শুক্রবার বিকালে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে আনা হয়। তাদের মধ্যে নাহিদ ও আসিফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আর বাকের ছিলেন তাদের সঙ্গে। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় সায়েন্স ল্যাব এলাকা থেকে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। রোববার ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এরপর থেকে তারা মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়েই ছিলেন। এর আগে ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় এক বন্ধুর বাসা থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। একদিন পর পূর্বাচল এলাকায় তাকে ফেলে যাওয়া হয়। নাহিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল আঘাতের চিহ্ন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ ও বাকেরকেও একই দিন কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। ৫ দিন পর তাদের দুজনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় যেখান থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, সেখানে ফেলে যাওয়া হয়।

সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর ডিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই তাদের ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্দোলন ঘিরে নাশকতার বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু ডিবির এ বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না সমন্বয়কদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন মহল। পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা ডিবির কাছে নিরাপত্তা চাননি। সমন্বয়কদের কেউ কেউ অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো মানে নেই বলে তারা জানান। আদালতে এক রিট আবেদনের শুনানিতে সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মন্তব্য করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের খাওয়ানোর ছবি প্রকাশ করে জাতির সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে। বলা হয়, ‘ডিবি অফিসে যাকে-তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।’ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয় ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকেও। বেশ কয়েকজন আইনজীবী গণমাধ্যমকে জানান, নিরাপত্তা হেফাজতের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। নানা সমালোচনার মুখে বুধবার ডিবি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। মানববন্ধন শুরুর আগেই ডিবি থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের। এরপরও ডিবি কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার