জিয়াউল আহসানের ‘কিলিং মিশন’ ফাঁস করলেন মাদুস রানা


, আপডেট করা হয়েছে : 08-08-2024

জিয়াউল আহসানের ‘কিলিং মিশন’ ফাঁস করলেন মাদুস রানা

সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নানা অপকর্মের তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন র‌্যাবের তৎকালীন কর্মকর্তা, পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা।


এক ভিডিও বার্তায় মাসুদ রানা বলেন, ‘যাকে সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহত দেওয়া হলো, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। যিনি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) প্রধান ছিলেন। তিনি র‌্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) ছিলেন। তিনি মেজর থাকতেই র‌্যাবে ছিলেন। বাংলাদেশে যত গুম-খুন হয়েছে, বিএনপিসহ অন্য যারা অ্যাক্টিভিস্ট—এই গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত জিয়াউল আহসান।’


জিয়াউল আহসানের কিলিং মিশনের বিষয়ে র‌্যাবের তৎকালীন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক নেতাদেরকে র‌্যাবের কালো গাড়িতে করে ধরে আনা হতো। এনে র‌্যাব ওয়ানের গোপন আস্তানায় আটক রাখা হতো। এরপর তাদের সময়মতো অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হতো। অজ্ঞাত স্থানেই তাদের লাশ ডুবিয়ে দেওয়া হতো, নয়তো তাদের দাফন করা হতো, না হয় এসিডের মাধ্যমে গলিয়ে দেওয়া হতো।’


মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত র‌্যাব সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলাম। তখন র‌্যাবের ডিজি ছিলেন বেনজীর আহমেদ। যিনি হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে পুলিশের হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে পালিয়ে গেছেন।’


তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি অনেক মানুষকে কীভাবে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসে গুম করা হতো। আমি রিসিপশনে ডিউটি করতাম। গুম হয়ে যাওয়া স্বজনরা আমার কাছে আসত। কিন্তু আমাদেরকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হতো। সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিলাম। তাদের সঙ্গে আমরা ওভাবে কথা বলতে পারতাম না। তাদেরকে কোনো তথ্য দেওয়া নিষেধ ছিল আমাদের জন্য।’


মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘তাদের (গুম হওয়া ব্যক্তি) স্বজনরা আসলে, যখন কান্না করত, তখন আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আমি অনেকের স্বজনদের তাদের গুম হয়ে যাওয়া স্বজনের তথ্য জানিয়ে দিতাম। মূলত যাদেরকে মেরে ফেলা হতো, হত্যা করা হতো—তাদেরকে আমি খারাপ সংবাদটা দিতাম না। কিন্তু যাদেরকে বন্দী করে রাখা হতো (তাদেরটা দিতাম)।’


হত্যার সিদ্ধান্ত জিয়াউল আহসান দিতেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদকে যখন অ্যারেস্ট করে আনা হলো। তাকে অ্যরেস্ট করে আনার সময় ধস্তাধস্তিতে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। তাকে র‌্যাবের গোপন কক্ষে আটক করে রাখা হয়েছিল দীর্ঘ দিন। এরপর তাকে একসময় ভারতে পাচার করে দিয়ে আসা হয়। তাকে অজ্ঞাত কারণে হত্যা করা হয়নি। তার পরিবার এসেছিল। তার স্ত্রী, ভাই গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। উনারা আমার কাছে বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। আমি উনাদের বেশ কয়েকদিন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ও কান্নাকাটি দেখে থাকতে পারেনি। আমি উনাদের কৌশলে আমার ফোন নম্বর দিয়ে আমি উনাদের সঙ্গে দেখা করি। দেখা করে উনাদের জানিয়ে দিয়েছি, সালাউদ্দিন সাহেবকে হত্যা করা হয়নি। উনি জীবিত আছেন। উনাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এই হত্যা করার সিদ্ধান্ত যিনি নিতেন, তিনি হলেন মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, যাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’


জিয়াউল আহসানকে শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে র‌্যাবের তৎকালীন কর্মকর্তা বলেন, ‘তাকে (জিয়াউল আহসান) শুধু অব্যাহতি দেওয়া হয়, বিচারের মুখামুখি না করা হয়—তাহলে এই আন্দোলনের এই স্বাধীনতার কোনো মূল্য থাকবে না।’


নিজেকে নিয়ে আর ভয় পান না জানিয়ে মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি আজকে আর কাউকে ভয় পাই না। আমি আজ বিশ্বাস করি আজকে আমাকে এই সত্য বলার জন্য কেউ গুম করে নিতে পারবে না। এই সত্য বলার জন্য কেউ আমাকে অ্যারেস্ট করবে না। সেই আমি আজ বুকে সাহস নিয়ে এই কথাগুলো বলছি।’



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার