শহরের তাপপ্রবাহ কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নিয়োগ পেয়েছিলেন চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন। এই নিয়োগের পর থেকে তুমুল সমালোচনা ওঠে। কারণ চিফ হিট অফিসার ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের কন্যা। যদিও তার নিয়োগটি ছিল আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের। উত্তর সিটি ছিল তার কর্ম এলাকা হওয়ায় সমালোচনাটা অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। পরে জানা গেছে, তাকে নিয়োগে সিটি করপোরেশনের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়েছিল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। চিফ হিট অফিস যে এলাকায় কাজ করবে, সেখানে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের হয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নই ছিল এই নিয়োগ। যে কারণে উত্তর সিটি এলাকায় চিফ হিট অফিসার যেসব কর্মকা- পরিচালনা করেছেন, তার সঙ্গে আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের নিজস্ব প্রকল্পও ছিল। যদিও তার নিয়োগের পর সেভাবে কাজ করার পরিবেশ গড়ে ওঠেনি উত্তর সিটিতে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেন ঢাকার দুই সিটির মেয়রসহ ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র। এরপর গত ১৯ আগস্ট মেয়রদের সরিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। এদিকে সরকার পতনের পর থেকে আলোচনা চলছে উত্তর সিটি করপোরেশনের হিট অফিসার এখন কী পদে থাকবেন? কী কাজ করবেন?এমন নানা প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে খোঁজ নেই চিফ হিট অফিসারের। ওই দিনের পর থেকে তিনি আর নগর ভবনে ফেরেননি। তিনি কোথায় আছেন, কাজ করবেন কিনা, এসব বিষয়ে জানতে তার মিডিয়া কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, তিনি এখনো উত্তর সিটি করপোরেশনের হিট অফিসার পদে আছেন।
চলতি বছর প্রচ- হিটওয়েভ চলাকালীন সময়ে হিট অফিসারের পরামর্শে ব্রাউজার মেশিন দিয়ে নগরীতে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেন সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া উত্তর সিটিতে গাছ লাগানো কর্মসূচিতেও হিট অফিসারের পরামর্শ ছিল বলে জানা গেছে। রাজধানীর বনানী এবং আগারগাঁও এলাকায় গ্রিন জোন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন হিট অফিসার। এ জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্পও নিয়েছিল। গত ২৭ এপ্রিল সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় ব্রাজউার মেশিন দিয়ে পানি ছিটিয়ে তাপ কমানোর বার্তা দেন। সেটিকে কৃত্রিম বৃষ্টি বলে জানান তিনি। সেদিন মেয়র আতিকুল বলেন, চিফ হিট অফিসার আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে। হিট অফিসার একজন একক ব্যক্তি। সে তো কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে না। সে পরামর্শ দিচ্ছে কিন্তু কাজগুলো আমাদের সবাইকে করতে হবে। তার পরামর্শেই জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা এই কাজগুলো করছি।
চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের নিয়োগ ও বেতন-ভাতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তখন মেয়র বলেছেন, ‘আমি দেখছি কয়েক দিন ধরে চিফ হিট অফিসারকে নিয়ে অনেকে বলছেন, তিনি সিটি করপোরেশন থেকে বেতন পাচ্ছেন আসলে এটা সঠিক নয়। এমনকি সিটি করপোরেশনে তার কোনো বসার ব্যবস্থাও নেই।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, গত ৫ আগস্টের পর তিনি (হিট অফিসার) আর নগর ভবনে ফেরেননি। তার নিয়োগটা দিয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন। কাজেই নিয়োগ বাতিল করেছে কিনা, তার জবাব নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান দিতে পারবে। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় কাজ করবে কিনা, সে বিষয়ে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।