পুলিশের সাবেক আইজিপি ও কেএমপির সাবেক কমিশনারসহ ১৯ জনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম খালিশপুর আমলি আদালতে এ মামলাটি করেছেন আনিছা সিদ্দিকা। ওই আদালতের বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য খালিশপুর থানা পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম লিটন।
এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, কেএমপি সাবেক পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক, সহকারী পুলিশ কমিশনার গোপিনাথ কাঞ্জিলাল, তৎকালীন খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গিয়াস, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম মোস্তফা, এসআই রেজোওয়ান উজ্জামান, এসআই এসকেএম শরিফুল ইসলাম, এসআই সাগর হালদার, কনস্টেবল তানজিন আক্তার, এসআই সঞ্জিত কুমার মণ্ডল, এসআই মো. রফিকুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শেখ নুরুজ্জামান, এসআই আরিফুজ্জামান, কনস্টেবল সাজ্জাদুল ইসলাম, কনস্টেবল কামরুন্নেছা হ্যাপি ও এসআই মো. রাকিবুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া বয়রা এলাকার মো. ইয়াছিন আরাফত, সৈয়দ নাহিদুজ্জামান, সৈয়দ নজিরুজ্জামানসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদীর ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা তানজিলুর রহমান। ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ‘বিসা বালির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জড়িত না। যেটি বিসা বালির ভাই সুখরঞ্জন বালি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিত হয়ে মন্তব্য করেন।’
স্ট্যাটাস দেওয়ার পর ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মোজাম্মেল হক, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার গোপিনাথ কাঞ্জিলাল ও খালিশপুর থানার তৎকালীন ওসি মুনীর উল গিয়াসের নেতৃত্বে ১৬ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় তিনজন ও আরও ১০-১৫ জন খালিশপুর থানাধীন ৫/১ বয়রা হাজী ফয়েজ উদ্দিন রোডে বাদীর বাবার বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করেন। তারা ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় ঘরের দরজা খোলার জন্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। এমনকি তারা গুলি করার হুমকিও দিতে থাকেন। এরপর আনিছা ছিদ্দিকা দরজা খুলে দেন। দরজা খুলতে দেরি হওয়ার কারণে ওসি মুনীর উল গিয়াস তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন তাকে সহকারী পুলিশ কমিশনার ও ওসি তার ছেলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তাকে বলা হয় ‘যুক্তরাষ্ট্রে বসে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছাড়িয়ে সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা ও জনগণকে উত্তেজিত করছে।’
তখন আনিছা সিদ্দিকা বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। এ কথা শোনামাত্র আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের মালামাল ভাঙচুর ও তছনছ করতে থাকেন। তারা ঘর থেকে তিনটি ল্যাপটপ, যার আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ টাকা এবং চারটি মোবাইল ফোন নিয়ে যান। এরপর তারা বাড়ি দ্বিতীয় তলায় ভাঙচুর এবং নিচতলায় অবস্থানরত ব্যাচেলরদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে আনিছা সিদ্দিকা, মো. রকিবুল ইসলাম ও মো. তামিম ইকবালকে গ্রেফতার করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/২৫ ডি ধারায় মামলা দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিরা খালিশপুর থানায় মিথ্যা মামলা করায় দেশসহ সমগ্র পৃথিবীতে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, বাদীর ছেলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রবাসী তানজিলুর রহমানের মা আনিছা সিদ্দিকাকে গ্রেফতার করা হয়। সেইসঙ্গে টাকা-পয়সা ও ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া এবং বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিল। এ ঘটনার পর পুরো বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ ঘটনায় আদালত মামলা নিয়েছেন এবং খালিশপুর থানাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে আদেশ দিয়েছেন।