ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য দুটি ফিরিয়ে নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিন জোসি। তাঁর অনুরোধে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. খোকন রোববার সকালে ভাস্কর্য দুটি এই অধ্যাপকের ল্যাবে দিয়ে এসেছেন।
এখন ভাস্কর্য দুটির গন্তব্য হবে কুড়িগ্রামের বরেণ্য আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকনের প্রতিষ্ঠা করা উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে। শনিবারই এ বিষয়ে অধ্যাপক জোসির সঙ্গে কথা বলেছেন এই আইনজীবী। ভাস্কর্য দুটি ‘ভাল স্থান’ পাচ্ছে বলে খুশি শিল্পী আমিরুল মোমেনিন জোসিও।
সম্প্রতি রাবির গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প এবং শিল্পকলার ইতিহfস বিভাগের এই অধ্যাপক তাঁর ভাস্কর্য দুটি নগরের বিনোদপুর বাজারের এক ভাঙারির দোকানে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। এ নিয়ে হইচই শুরু হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলো কোথাও স্থাপন করা সম্ভব না। তাই ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। ভাস্কর্য দুটি ভেঙে ফেলার কথা ছিল ভাঙারি ব্যবসায়ীর। কিন্তু দোকানের সামনে রাখায় এমন আলোচনা শুরু হবে তা তিনি বোঝেননি।
রোববার সন্ধ্যায় অধ্যাপক জোসি উত্তরভূমিকে বলেন, ‘আসলে বিষয়টা অনেকে রাজনীতির দিকে নিয়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এগুলো বিক্রির সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই।’ তিনি জানান, শনিবার বরেণ্য আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন তাঁর মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠিয়ে ভাস্কর্য দুটি জাদুঘরের জন্য নিতে চান। পরে এ বিষয়ে তাঁদের দুজনের মোবাইলে কথাও হয়েছে।
অধ্যাপক জোসি জানান, তাঁর অনুরোধে রোববার সকালে ভাঙারি ব্যবসায়ী ভাস্কর্য দুটি ল্যাবে দিয়ে গিয়েছেন। তিনি যে টাকায় বিক্রি করেছিলেন, সেই টাকা ও ভ্যানের ভাড়া ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন। দ্রুতই ভাস্কর্য দুটি রাজশাহী থেকে কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি উত্তরভূমিকে বলেন, ‘ভাস্কর্য দুটি ভাল একটা জায়গা পাচ্ছে। এ জন্য আমি খুব খুশি। এখন আমি এটা ল্যাবে যত্ন করেই রেখেছি।’
কুড়িগ্রামে বরেণ্য আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন তাঁর ‘লিংকনস ইন’ নামের বাড়িতে নিজের সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন মানুষের দেওয়া ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ, বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস এবং আঞ্চলিক ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা’ গড়ে তুলেছেন। ২০১২ সাল থেকে আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বাড়িতেই যাত্রা শুরু করে ‘উত্তরবঙ্গ জাদুঘর’। আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২২ সালে একুশে পদক ও ২০২৪ সালে স্বাধীনতা পদক পান।