সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান ড. ইউনূসের


, আপডেট করা হয়েছে : 28-11-2024

সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান ড. ইউনূসের

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে দেশে গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বিএনপি। দেশের শান্তি বিনষ্টকারী শক্তিকে প্রতিহত করতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠনে উদ্যোগ নেওয়ার  জন্য দলটির প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্ব দলটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল।


সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে প্রধানত জাতীয় ঐক্য নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা দেশের সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন। ছাত্র-জনতা, শ্রমিকসহ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি শান্তির বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা; হিন্দু-মুসলিমসহ জাতিধর্মনির্বিশেষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে— সে কথা বলেছেন। বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি, সবচেয়ে বেশি জরুরি নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো, এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে যতদ্রত সম্ভব নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আরেকটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি— ইউনিয়ন পরিষদ যেগুলো আছে সেগুলো বেশির ভাগ ফ্যাসিস্ট সরকারের জোরজবরদস্তির নির্বাচনে তাদের মতো নিয়ে এসেছিল। আমরা মনে করি, যেহেতু সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এখন ইউনিয়ন পরিষদও ভেঙে দিয়ে পরবর্তী নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপির প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন—দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।


মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েক দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগ, সেটি প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে এসেছি। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয় দ্রুত শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। দেশে যাতে এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয়—যাতে বিভাজন সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, এখন যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হলো জাতীয় ঐক্য। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য, বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই কথাগুলো আমরা বলে এসেছি।


বিএনপির মহাসচিব বলেন, জনগণের যে দুর্ভোগ, বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিষয়টি তুলে ধরেছি। টিসিবির ট্রাকগুলো এলাকাভিত্তিক বাড়ানোর কথা বলেছি। সড়কে ট্রাকসহ যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে বলেছি। সেই সঙ্গে কৃষিতে, বিশেষ করে সার বিতরণের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা নিয়ন্ত্রণ করছে। এক্ষেত্রে যারা জনগণের পক্ষে আছে তাদের এখানে নিয়ে আসার কথা আমরা বলেছি। সেই সঙ্গে শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা বলেছি, নরমাল যে অ্যাকটিভিটিজ আছে সেটা যেন চালু থাকে। বিশেষ করে, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বেতনের ক্ষেত্রে যেন বাধা সৃষ্টি না হয়। তারা যেন নিয়মিত বেতন পান, সেজন্য সরকার যেন ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ট্রেড বডিগুলো ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন ট্রেডবডি করতে হবে। সামগ্রিকভাবে আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য গঠন করার আহ্বান জানিয়েছি।


এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকাণ্ড এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে যা যা করার দরকার, সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে।


প্রেস সচিব বলেন, চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে, যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য। ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও ভাঙচুরের অভিযোগে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার