ঠান্ডা হচ্ছে চালের বাজার


, আপডেট করা হয়েছে : 18-07-2022

ঠান্ডা হচ্ছে চালের বাজার

বেসরকারিভাবে সীমিত পরিসরে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। গত মাসে চাল আমদানির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা চালের দামে লাগাম আসে।

এখন আমদানি শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম আরও কমবে বলে আশা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

তবে ব্যববায়ীরা বলছেন, ২৭ শতাংশ শুল্ক রাখায় মোটা চাল বেশি আমদানি হবে না। ফলে আমদানির পথ খুললেও বাজারে প্রভাব পড়ার আশা কম।

রোববার পর্যন্ত চাল আমদানির জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল। ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এ পর্যন্ত ইমপোর্ট পারমিশন (আইপি) ক্লিয়ারেন্স নেওয়া হয়েছে ৪ লাখ টনের বেশি। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে ১১শ টন চাল ভোমরা ও বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন রোববার রাতে বলেন, ‘আমদানিকৃত চাল দেশে আসতে শুরু করেছে। ঠিক কী পরিমাণ আমদানি হয়েছে, তার নির্দিষ্ট তথ্য এখনো মন্ত্রণালয়ে আসেনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তাদের হিসাব মতো আমদানি করেন। আমদানির জন্য অনুমোদিত পরিমাণের অর্ধেক চালও যদি আসে, সেটাও ৪ লাখ টনের মতো হয়ে যাবে। তবে এটা আমদানিকারকদের বিষয়।’

তবে প্রত্যাশিত মাত্রার চাল আমদানি না হলে তার প্রভাব বাজারে পড়বে না বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ আমদানিকারকদের একজন চিত্ত মজুমদার। তার প্রতিষ্ঠান মজুমদার প্রডাক্টস ৮ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছে।

এর মধ্যে এলসি খোলা হয়েছে ৮০ হাজার টনের মতো। রোববার রাতে তিনি বলেন, ‘এত বেশি শুল্ক (২৭ শতাংশ) দিয়ে কম দামের চাল আমদানি হবে না। আমরা ৫০০ টনের কিছু বেশি কাটারি (ভালোমানের চাল) আমদানি করেছি।

কিন্তু স্বর্ণা, মিনিকেট আমদানি করলে দেশের বর্তমান দামের সমান হয়ে যায়।’ চিত্ত মজুমদার আরও বলেন, ‘এসব চাল আমরা বর্ধমান থেকে আমদানি করতাম। কিন্তু সেখানে এখন দাম বেশি, আমাদের চাল এসেছে বিহার থেকে।’

এবার বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩০ জুন প্রথম দফায় ৯৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৯ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।

বরাদ্দপত্রে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ১১ আগস্টের মধ্যে তাদের চাল আমদানি করে বাজারে ছাড়তে বলা হয়েছে। তার আগেই একাধিক প্রতিষ্ঠান চাল আমদানি শুরু করেছে। তবে অনুমোদন নেওয়ার তুলনায় আমদানির পরিমাণ অনেক কম।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশেই চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তাই তারা সতর্ক পদক্ষেপে এগোচ্ছেন। রোববার পর্যন্ত একাধিক দফায় ৪ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় কিছু প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে চাল আমদানি শুরু করেছে। তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প লাভেই চাল বিক্রি করতে পারে। কিন্তু ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি লাভের আশায় চাল আমদানি করে।

বর্তমানে দেশে চালের বাজারের অবস্থা স্থিতিশীল। গত সপ্তাহের চেয়ে চলতি সপ্তাহে চালের দাম দু-চার টাকা করে কমেছে। এ অবস্থায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো চাল আমাদানির পথে নাও হাঁটতে পারে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার অভিমত-সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশেই পর্যাপ্ত চাল আছে। তাই খুব বেশি চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন বলে মনে হয় না।

যারা কারসাজি করতে চেয়েছিলেন তারা আমদানির তথ্য জেনে বাজারে চাল ছাড়তে শুরু করেছেন। এদিকে যুগান্তরের বেনাপোল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রোববার ১৪টি ট্রাকে প্রতি টন ৩৪০ ডলার (৩০ হাজার ৬৫০ টাকা) মূল্যের ৫১২ টন চাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে।

আমদানি করা সেদ্ধ (মোটা স্বর্ণা চাল) প্রতি কেজি ৪৭-৪৮ টাকায় দেশীয় বাজারে বিক্রি হবে বলে জানা গেছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রোববার ঢাকায় প্রতি কেজি সরু চালের দাম ছিল ৬৪ থেকে ৭৫ টাকা, গত সপ্তাহে এ চালের দাম ছিল ৬৪-৮০ টাকা।

গত বছর এই সময়ে সরু চালের দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মাঝারি চালের বর্তমান দর ৫২ থেকে ৫৮ টাকা। গত সপ্তাহে এ চালের দাম ছিল ৫২ থেকে ৬০ টাকা।

গত বছর এই সময়ে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫২-৫৬ টাকা। এছাড়া মোটা চালের দর এখন ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দাম একই ছিল। তবে গত বছর একই সময়ে মোটা চালের দাম ছিল ৪৬-৫০ টাকা।

বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার যে উদ্বেগে ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। কারণ সরকারের কাছে থাকা ধান, চাল ও গমের সন্তোষজনক মজুত আছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারের খাদ্যশস্য মজুত আছে প্রায় পৌনে ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে চাল আছে ১৩ লাখ ২২ হাজার টন, ১ লাখ ৬৭ হাজার টন গম এবং ১ লাখ ১২ হাজার টন ধান আছে সরকারের হাতে।


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার