পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদের যত অপকর্ম!


, আপডেট করা হয়েছে : 19-07-2022

পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদের যত অপকর্ম!

রাজধানীর মিরপুরের গাবতলীতে ৩৮ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনায় আটক রূপনগর থানার পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই জাহিদকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। আটক হওয়ার পর পুলিশ সদস্যের নামে তার ভয়ঙ্কর রূপ বেরিয়ে আসছে। তল্লাশির নামে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়সহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি অফিসে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

এদিকে গতকালের (সোমবার) স্বর্ণ লুটের ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে মিরপুরের রূপনগর থানায়। জাহিদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কোনো পুলিশ সদস্য। এমনকি তাকে না চেনার ভান করছেন কেউ কেউ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপনগর থানার এক কনস্টেবল বলেন, জাহিদ সব সময় মরিয়া হয়ে থাকতেন। মনে হতো ডেসপারেট। তিনি সহজে কারো সঙ্গে মিশতেন না।অধিকাংশ সময় সিভিল ড্রেসে (পোশাক) থাকতেন। সব সময় ইনফরমারদের (পুলিশের সোর্স) নিয়ে মোটরসাইকেলে টহল দিতেন। 

জানা গেছে, রূপনগর থানা পুলিশের হোন্ডা টহল টিম নামে একাধিক টিম রয়েছে। প্রতিদিন কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশ সদস্যরা টহলে বের হন। জাহিদ ছিলেন ওই টিমের সদস্য। এই টিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা এই টিমের নাম শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে উঠেন।  

চলতি বছর জাহিদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মাদক মামলা দেওয়ার অভিযোগ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী রাসেল শিকদার। তিনি রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। গত ১ মার্চ পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসির কাছে তিনি অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাসায় ফেরার সময় মিরপুর-৭ নম্বর মিল্ক ভিটার সামনে পৌঁছালে ইয়াবার কথা বলে তার দেহ তল্লাশি করেন জাহিদ। কোনো মাদক না পেলেও রাসেলকে থানায় নিয়ে গাঁজা রাখার অভিযোগে মামলা দেয় পুলিশ। 
জামিনে বের হওয়ার পর থেকে এএসআই জাহিদ ও তার সোর্স আলামিন তাকে পুনরায় মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। মূলত সোর্স আলামিনের সঙ্গে বিরোধ থাকায় পুলিশ তাকে আটক করে মামলা দিয়েছে। 

গত বছর ১৯ আগস্ট রাশিদা নামে ক্যান্সার রোগী এক নারীর কাছ থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে রূপনগর থানার এসআই মাুসদ ও এএসআই জাহিদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২১ আগস্ট ক্যান্সার রোগী রাশিদা ওই  পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। 

অভিযোগে তিনি জানান, তল্লাশির নামে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ আড়াই লাখ টাকা নিয়ে যায় পুলিশ। চলে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে এও বলে যায়, টাকার কথা কাউকে জানালে ৫০ পিস ইয়াবাসহ কোর্টে চালান দেওয়া হবে তাকে। 

আরও জানা গেছে, এএসআই জাহিদের আল আমিন, অপু, সোহেল ও আল ইসলাম নামে কয়েকজন সোর্স রয়েছে। এই সোর্সদের ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে টাকা আদায় করেন জাহিদ। রূপনগর থানার কোল ঘেঁষে একটি পরিত্যক্ত রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। জাহিদের সোর্সরা রিকশার যাত্রী, পথচারী, গার্মেন্ট শ্রমিক, নিরীহ মানুষ ও মাদক ব্যবসায়ীদের ওই গ্যারেজে ধরে নিয়ে আসেন। এরপর ‘রফাদফা’ করে তাদের ছেড়ে দেন জাহিদ। 

রূপনগর থানার ওসি আরিফুর রহমান সরদার বলেন, দারুস সালাম থানার স্বর্ণ লুটের একটি মামলায় এএসআই জাহিদকে ডিসি অফিসে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

মিরপুর বিভাগের এডিসি আরিফুল ইসলাম জানান, স্বর্ণ লুটের ঘটনায় জাহিদের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। 


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার