জনগণের ভোগান্তি দূরীকরণ, দুর্নীতি রোধ এবং মামলা কমানোর লক্ষ্যে সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করছে। ভূমি সেবা গ্রহণ এবং অভিযোগ প্রতিকারের লক্ষ্যে বিদ্যমান হটলাইনের টোল কমানোর চিন্তা ভাবনা রয়েছে। জমির মালিকানা সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বর্তমানে ৪২টি ট্রাইব্যুনাল চালু আছে এবং ল্যান্ড ক্রাইম অ্যাক্ট প্রণয়ন কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। ভূমি প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগসহ মাঠ পর্যায়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন।
শনিবার এফডিসিতে ভূমি সেবা সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ভূমি সচিব আরও বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও দুর্নীতি হ্রাসে ভূমি সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল নজরদারি করা হচ্ছে। ভূমির রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামজারি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষে ডিজিটাল তথ্য বিনিময়ের জন্য আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। ভূমির মালিককে চূড়ান্ত সনদ প্রদানের বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার আইন প্রণয়ন করা হবে। ভূমির মালিকানা স্পষ্টকরণের লক্ষে সারা দেশে ২ লাখ ৭০ হাজার পিলার স্থাপন করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত একটি জটিল প্রক্রিয়া। জমি বেচা-কেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, পর্চা, খতিয়ান, খাজনা, ভূমি জরিপ ইত্যাদি সেবা পেতে প্রায় প্রত্যেকটি স্তরেই ঘুস, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এখনো বিদ্যমান। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সেবা কার্যক্রম শুরু হবার পর জনভোগান্তি কিছুটা কমলেও, ভূমি সেবা প্রদানে সুশাসন নিশ্চিত করা এখনো সম্ভব হয়নি। দেশের ভূমি অফিসগুলো এখনো পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত নয়।
তবে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা শুরু হওয়ার পর মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনে ফি জমা দিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর, ই-নামজারি ও খাজনা প্রদান করতে পারছে। অতি সহজেই খতিয়ান বা পর্চা অনলাইনে পেয়ে যাচ্ছে। ১৬১২২ হটলাইনে ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা ফোনের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারছে। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষিত জনবলের স্বল্পতা ভূমি সেবা প্রদানে এখনো বড় বাধা।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ভূমি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে ১০ দফা সুপারিশ পেশ করেন।
সুপারিশগুলো হলো- ১. জমি দখল, ভূমি নিয়ে জাল জালিয়াতি, অনিয়ম দুর্নীতি নিরোধসহ ভূমি অপরাধ দমনে ল্যান্ড ক্রাইম অ্যাক্ট প্রণয়ন।
২. ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।
৩. ভূমি ব্যবস্থাপনায় পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার অথবা মাঠ পর্যায়ে নন ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনা করা।
৪. অতি দ্রুত ল্যান্ড ডাটা ব্যাংক তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করা।
৫. দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের হালনাগাদ আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ করা।
৬. ভূমি ব্যবস্থাপনায় জনগণের ভোগান্তি নীতি নির্ধারকদের জানানোর লক্ষে গণশুনানির ব্যবস্থা করা।
৭. ভূমি প্রশাসনের দক্ষ জনবল বাড়িয়ে কারিগরি জটিলতা কমিয়ে দালাল নির্ভরতা দূর করা।
৮. জরাজীর্ণ ভূমি সেবা অফিসগুলোর অবকাঠামোর উন্নয়ন করে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তথ্যপ্রবাহ জোরদারকরণ।
৯. জনসাধারণের সেবার চিন্তা ভাবনা থেকে ভূমি সেবা কল সেন্টারের ১৬১২২ হটলাইনটি টোল ফ্রি করা।
১০. সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত ১৬ হাজারেরও বেশি নকল নবিশদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে তাদেরকে মাস্টার রোল থেকে রাজস্ব খাতে অর্ন্তভুক্ত করা।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এই প্রতিযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা ও সাংবাদিক উম্মুল ওয়ারা সুইটি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।