সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির ‘ট্রাক সেল' কার্যক্রম বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কারণ, বাজারদরের চেয়ে কম দামে বিভিন্ন নিত্যপণ্য পাওয়ায় তারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত। এছাড়া, টিসিবির কার্ডধারী নয়, এমন ব্যক্তিরাও ঢাকা ও চট্টগাম মহানগরীতে এই ট্রাক থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে চাল, তেল, ডাল কিনতে পারতেন। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বরের পর এই কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষরা।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকার ভ্যানচালক রফিক মিয়া বলেন, 'বাজারে এখন চাল, ডালসহ সবকিছুর দামই বেশি। টিসিবির ট্রাক থেকে এসব পণ্য অনেক কম দামে কেনা যেত। এখন ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি বন্ধ হওয়ায় বেশ কষ্ট হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত অক্টোবর মাসে ট্রাকে করে তেল, ডাল ও চাল বিক্রি শুরু করে টিসিবি। ফলে প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য কেনার সুযোগ পেতেন। এই কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরীতে ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০টি ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে অর্থাৎ প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও চাল ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এই কার্যক্রমের আওতায়, একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ২ লিটার তেল ২০০ টাকায়, ২ কেজি মসুর ডাল ১২০ টাকায় এবং ৫ কেজি চাল ১৫০ টাকায় কিনতে পারতেন। বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, আগে সরকারের বিপণন প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ট্রাকে নিত্যপণ্য বিক্রি করলেও গত কয়েক বছর ধরে সারা দেশে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ট্রাক সেল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলে নিম্ন আয়ের মানুষের সুবিধার্থে তখন সাময়িক সময়ের জন্য ট্রাক সেল কর্মসূচি চালু করে টিসিবি। এবার শুরুতে এ কার্যক্রম ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চালু থাকার কথা থাকলেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় তা ডিসেম্বর পর্যন্ত চালু রাখা হয়। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির এই বাজারে বাড়তি আর্থিক চাপ সামলাতে না পেরে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ ট্রাক সেল কর্মসূচি চাল রাখার দাবি জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেছেন, শুধু প্রয়োজন অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই কার্যক্রম সারা বছর চালানো হয় না। এবার নভেম্বর পর্যন্ত ট্রাক সেল কর্মসূচি চালানোর কথা থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।জানা গেছে, ট্রাক সেল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও টিসিবির স্মার্ট কার্ডধারী ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত পণ্য সরবরাহ করা হবে। আগের এক কোটি কার্ডধারীর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে এখন ৫৭ লাখ কার্ডধারীরা এ সুবিধা পাবেন। চলতি জানুয়ারি মাসে স্মার্ট কার্ডধারী ব্যক্তিদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে বিভিন্ন নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টিসিবির পণ্য বিতরণের জন্য এক কোটি পরিবারকে কার্ড দেওয়া হয়। তবে এসব কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।