সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি দেখে অবাক হয়েছিলেন জাহিদ মালেক


, আপডেট করা হয়েছে : 20-01-2025

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি দেখে অবাক হয়েছিলেন জাহিদ মালেক

সাটুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফাজ উদ্দিন শিক্ষক ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসার পর তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সহায়তায় সাটুরিয়ার ফুকুরহাটি ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব, প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন। তার প্রভাবে কোটিপতি চেয়ারম্যান হয়ে যান। ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে এলাকার উন্নয়ন না করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। আফাজ উদ্দিনের বাড়ি দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।


চাঁদাবাজি আর সরকারি প্রকল্প আত্মসাৎ করে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন সাটুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুকুরহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফাজ উদ্দিন।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, আফাজ উদ্দিন সাটুরিয়া উপজেলার জান্না উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। গত শাসনামলে উপজেলার প্রভাবশালী নেতা হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের তালিকাভুক্ত হন। এলাকায় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে গড়ে তুলে সন্ত্রাসী বাহিনী। সিএনজি, হ্যালোবাইক থেকে মাসোহারা, সরকারি প্রকল্প আত্মসাৎ করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। তিনি ফুকুরহাটি গ্রামে গড়ে তুলেছে ডুপ্লেক্স একটি বাড়ি। সাটুরিয়া উপজেলার কান্দাপাড়া বাজারে রয়েছে কোটি টাকার মার্কেট। এলাকায় কৃষি জমি রয়েছে তার প্রায় ত্রিশ বিঘা। তার বাবা মৃত আজমত আলী মানিকগঞ্জের ঘিওর বাজার থেকে পাটি কিনে এনে সাটুরিয়া বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতেন।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে থেকে মানিকগঞ্জ এবং গোলড়া রুটে প্রায় শতাধিক সিএনজি চলাচল করে। এই সিএনজি স্ট্যান্ডের ওপর আফাজ উদ্দিনের কালো হাতের থাবা পড়ে। ওইসব সিএনজি থেকে মাসে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা নিতেন তিনি। এছাড়া হ্যালোবাইক আরো ১০ হাজার করে মাসোহারা দিতে হতো।


এছাড়া তার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের বর্ধিতাংশ সরকারি জমিতে নির্মিত দোকান ভবন নির্মাণ করার সময় জামানত হিসেবে পাওয়া ২১ লাখ টাকা পরিষদের হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে নিজের হিসাব নম্বরে জমা করার অভিযোগ রয়েছে। ১৪টি দোকান ভাড়া বাবদ ৭৮ হাজার ৪০০ টাকার হিসাবে করা হয়েছে অনিয়ম। স্থানীয় মন্ত্রণালয় বিভাগের অনুমতি না নিয়ে সরকারি জমিতে ১৪টি দোকানঘর নির্মাণ করেন। ভূমিসংক্রান্ত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ২০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে ১৪ ব্যক্তির নামে ৯৯ বছরের লিজ দেন তিনি। প্রতি লিজ গ্রহীতার কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত নেন। পরে লিজ গ্রহীতারা প্রতি দোকান থেকে ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা করে ভাড়া নিয়েছেন।


২০২০-২১ অর্থবছরে অডিট আপত্তিতে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়ে। এতে বলা হয়, নিজস্ব খাত বাবদ মোট ২১ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০ টাকার আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। অডিট আপত্তির পর স্থানীয় সরকার মানিকগঞ্জের এক চিঠিতে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সমুদয় টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সমুদয় টাকা জমা না পেয়ে পরবর্তী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আরেক চিঠিতে ওই বছরের ৩০ আগস্ট সমুদয় টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সমুদয় টাকা জমা না দেওয়ায় ২০২২ সালের অডিট আপত্তিতে পুনরায় ধরা পড়লে ওই ইউনিয়নের সব ধরনের প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার নোটিশ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এছাড়া ওই ইউনিয়নের নামে বেনামে অসংখ্য প্রকল্প আত্মসাৎ করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, একদিন সাটুরিয়া একটা প্রোগ্রাম শেষ করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আফাজ উদ্দিনের বাড়িতে যান। এ সময় জাহিদ মালেক আফাজ উদ্দিনের ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখে অবাক হয়ে যান তখন আফাজ উদ্দিনকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন মালপানি কেমন কামিয়েছেন আপনি স্থানীয় মুকুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, আফাজ উদ্দিন গত ১৫ বছরের ইউনিয়নের কোন উন্নয়ন করেনি। শুধু নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছে। এলাকায় বিঘা বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।


চেয়ারম্যান আফাজ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমি কোনদিন সিএনজি থেকে কোন টাকা-পয়সা নেই নাই। পরিষদের ২১ লাখ টাকা আমি সরকারকে ফেরত দিয়েছি। আমার বাড়ি আর মার্কেট নিজস্ব টাকা দিয়ে বানিয়েছি। তিনি সম্প্রতি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারোভোগ করে জামিনে বের হয়েছেন।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার