২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৬ বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের কারা মুক্তি দেওয়া হয়।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় চলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলায় বৃহস্পতিবার ভোরে ১২৬ জন বিডিআর সদস্যের মুক্তির আদেশ কারাগারে এসে পৌঁছায়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ১২৬ জনকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এর মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৪ জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৮৯ জন এবং কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) কিছু সদস্যের কথিত বিদ্রোহের নামে সংস্থাটির সদর দপ্তর রাজধানীর পিলখানায় নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়।
ওই সময় প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ ব্যক্তি। ওই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুই কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার বিচার সেনা আইনে করার সুপারিশ করা হলেও উচ্চ আদালতের মতামতের পর সরকার প্রচলিত আইনে বিচার করে। ওই ঘটনায় দুটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এর একটি ছিল হত্যা মামলা আর অন্যটি বিস্ফোরক আইনের মামলা। খুনের মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ২৭৮ জন খালাস পান। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর এই মামলায় হাইকোর্টের আপিলের রায় হয়।
অপরদিকে বিস্ফোরক মামলায় ৮৩৪ জন আসামি রয়েছে। মামলাটি হত্যা মামলার সঙ্গে বিচার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করেনি। এক পর্যায়ে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত করে দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে বিলম্ব হয়।
সদ্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পাওয়া হাবিলদার সোলায়মান ও শহীদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া ও আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমরা মুক্তি পেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী ছিল না। তাও আমাকে ১৬টি বছর মিথ্যা মামলায় জেল খাটতে হয়েছে। এখন সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমরা যারা চাকরির শেষ মুহূর্তে ছিলাম। আমাদের সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা যেন দেওয়া হয় এবং আমার অন্যান্য ভাই ব্রাদারদের চাকরির মেয়াদ আছে তারা যেন পুনরায় তাদের চাকরি ফিরে পায়।