জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের দাবিতে নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে আগামীকাল বুধবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এরপর প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশন করেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার প্রশাসন এই কোটায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনে। ক্যাম্পাসে জাকসুর তফসিল এবং আসন্ন ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে তারা অনশন ভাঙেন। এরপর আজ সকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগের মতো পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে যান। এ সময় ভবনের দেয়ালে ‘কোটা বাতিল করো’ লেখা সংবলিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন কয়েকজন কর্মচারী।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে গেলে এক শিক্ষার্থীকে কর্মচারীরা ধাক্কা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে যান এবং দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কর্মচারীরা তাদের কর্মসূচি শেষ না করে চলে যান। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিবির ভূঁইয়া বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কারোরই পোষ্য কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অজপাড়াগাঁয়ের একজন কৃষকের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরে পড়াশোনা করতে পারে, তাহলে একজন শিক্ষার্থী যে জাহাঙ্গীরনগরে ছোট থেকে বড় হয়েছে, ভালো স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে, তার কোনো ধরনের প্রিভিলেজ (সুবিধা) লাগবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। এই পোষ্য কোটা চিরতরে বাতিল করতে হবে।’
অন্যদিকে পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে আগামীকাল বুধবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। অফিসার সমিতির সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহমান বাবুল এবং কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বকশিসহ ছয় নেতাদের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পোষ্য কোটায় ভর্তি বিভাগীয় সব শর্ত বাতিল করে পূর্বের ন্যায় বহাল রাখার দাবিতে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হলো। শুধু জরুরি পরিষেবাসমূহ আওতামুক্ত থাকবে তবে আন্দোলনের প্রয়োজনবোধে জরুরি সেবাসমূহ আওতাভুক্ত করা হবে।
এর আগে, কোটা বাতিলের দাবিতে গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আমৃত্যু গণঅনশন শুরু করেন। পরে সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসানের আশ্বাসে তারা জুস পান করে অনশন ভাঙেন। এদিন বিকালে শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতির সাথে আলোচনা করে পোষ্য কোটা সংস্কারের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সোমবার সন্ধ্যায় ফের অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের অনশনের মুখে পোষ্য কোটায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।