নতুন দলে সব পক্ষের মন জোগাতে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ছে, চলতি সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ


, আপডেট করা হয়েছে : 22-02-2025

নতুন দলে সব পক্ষের মন জোগাতে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ছে, চলতি সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষায়। কিন্তু যাত্রা শুরুর আগেই দলের শীর্ষ পদের দাবি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির এই দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতাদের পদ দাবি করাকে কেন্দ্র করে বিরোধের সূত্রপাত হয়। শেষপর্যন্ত সব পক্ষকে খুশি রাখতে বা সবার মন জোগাতে সমঝোতা করে শীর্ষ পদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।


এরই মধ্যে গত কয়েক দিনে কয়েকদফা সমঝোতা বৈঠক হয় বিরোধে জড়িয়ে পড়া পক্ষগুলোর মধ্যে। এসব বৈঠকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব পদ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই দুটি পদ বা তার অধিক নতুন পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। পদ তৈরির মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের নতুন দলে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।


এদিকে এই নতুন দলের আহ্বায়ক পদে নাহিদ ইসলামের মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারও কোনো আপত্তি ছিল না। সদস্যসচিব হিসেবে কে আসবেন, মূলত তা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সমঝোতার ভিত্তিতে এই পদে আখতার হোসেনের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত। নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যেকোনো সময় অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করতে পারেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।অন্যদিকে নতুন দলের মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে দেখা যেতে পারে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে।


এছাড়াও শীর্ষ ছয়টি পদের বাইরে নতুন দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা ও আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্যসচিব অনিক রায়, মাহবুব আলম ও অলিক মৃ। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদকেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে।


নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। তবে ওই দিনই অনেক বড় পরিসরে জমায়েত করার পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই। তবে গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত নতুন দলের নাম চূড়ান্ত হয়নি।


নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, নাগরিক কমিটি সবাইকে নিয়েই পথ চলতে চায়। সেই জায়গা থেকে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলো নিয়ে একধরনের বোঝাপড়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আলী আহসান জোনায়েদের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে যিনি ফেসবুকে বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন, তাকে আপাতত নতুন দলে কোনো পদে রাখা হচ্ছে না।


এইদিকে নতুন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুটি পদে আসতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক দুই সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ও জাহিদ আহসান। আর সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে আসতে পারেন সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের ও সানজানা আফিফা অদিতি।


নতুন এই সংগঠন সম্পর্কে ধারণা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে ১৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা অন্তত সাতজন সমন্বয়ক। তারা জানান, এই ছাত্রসংগঠনের নীতি হবে ‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট’ ও ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’। ছাত্র-নাগরিকের স্বার্থ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করবে তারা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।


নতুন ছাত্রসংগঠন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের পাঁচ নেতা জানান, নতুন ছাত্রসংগঠনের যাত্রা শুরু হতে পারে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে। যেকোনো দিন এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। শুরুতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণা করা হবে। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি পরে করা হবে। সংগঠনটির নামের বিষয়ে একাধিক প্রস্তাব আছে; তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় দুজন নেতা বলেন, নতুন ছাত্রসংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হিসেবে আবু বাকের মজুমদার ও সদস্যসচিব পদে জাহিদ আহসানের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত। এর পরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী ও রিফাত রশীদ। এই চারজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক। তাদের মধ্যে জাহিদ আহসান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলের সম্পাদক। আর রিফাত রশীদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য।


নতুন ছাত্রসংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আবদুল কাদেরের নাম প্রায় চূড়ান্ত বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা। গণঅভ্যুত্থানের সময় ৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে আলোচনায় আসেন কাদের। কাদেরের সঙ্গে নতুন ছাত্রসংগঠনের সদস্যসচিব হতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সানজানা আফিফা অদিতি।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, আগামী এপ্রিল-মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন হতে পারে- এমন আলোচনা আছে। যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আবদুল কাদের ও আবু বাকেরকে যথাক্রমে ভিপি ও জিএস প্রার্থী করে প্যানেল ঘোষণা করবে নতুন ছাত্রসংগঠন।


নতুন ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশের বিষয়ে রিফাত রশীদ বলেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগে তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করছেন। নতুন ছাত্রসংগঠনের বিষয়ে ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই নতুন এই ছাত্রসংগঠনের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার