ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ইউরোপ কি যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হতে পারে?


, আপডেট করা হয়েছে : 01-03-2025

ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য ইউরোপ কি যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হতে পারে?

জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর (প্রধানমন্ত্রী) ফ্রিড্রিখ মের্টজ বলেছেন, ইউরোপের একটি স্বাধীন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলতে হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের ভাগ্যের প্রতি মোটামুটি উদাসীন হয়ে পড়েছে। মের্টজের ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন দল ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে জয়লাভ করে।


ইউরোপের যেকোনো নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শীর্ষ অগ্রাধিকার হবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াই এখন চতুর্থ বছরে পা দিয়েছে।


ইউক্রেন এ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ব্যাপক সামরিক সাহায্যের কারণে, যা দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।


নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে চান এবং ওয়াশিংটনের খরচ পুষিয়ে নিতে চান। এমনকি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে, তার বিনিময়ে তিনি ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার চেয়েছেন।


ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করতে এবং বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে ইউরোপীয় দেশগুলো সামরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে কতটা সাহায্য করতে সক্ষম, তা যাচাই করতে ভয়েস অব আমেরিকার রাশিয়ান সার্ভিস বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে।


কিয়েভ-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা থার্ড সেক্টর অ্যানালিটিকাল সেন্টারের পরিচালক অ্যান্দ্রি যলোতারেভ ভিওএকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।


তিনি বলেন, বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অস্ত্রের মজুদ আছে, তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইন্টেলিজেন্স তথ্য সরবরাহ করে থাকে।


তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে রকম স্যাটেলাইট গ্রুপিং আছে, ইউরোপের সব দেশ মিলে সেটি নেই। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন অস্ত্র আছে যা ইউক্রেনের জন্য অপরিহার্য এবং অপূরণীয় – পেট্রিওট (আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা), এটিএসিএমএস (দূর পাল্লার গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র), হিমারস (মাল্টিপল রকেট), এবং আর্টিলারি এবং সাঁজোয়া যানের খুচরা যন্ত্রাংশ এবং আরও অনেক কিছু। এগুলোর সরবরাহ কোনোভাবেই থামানো যাবে না।


যলোতারেভের মতে, ইউরোপ যদিও অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সাহায্য বন্ধ করে দেয় তাহলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যে এক সঙ্গে সেই ঘাটতি শুধুমাত্র আংশিক পুরন করতে পারবে।


তিনি বলেন, তাদের প্রচেষ্টা নেতিবাচক প্রভাব কমাতে পারবে, কিন্তু খারাপ পরিণতি এড়াতে পারবে না। এটা শুধু অনিবার্য পরিণতিকে বিলম্বিত করবে। এই মুহূর্তে ইউরোপের সামরিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল না।


স্বেচ্ছা-নির্বাসিত রুশ মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী মার্ক ফেইগিন ভিওএ’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত দুটো দেশ, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স, ইউরোপের অংশ এবং সম্মিলিতভাবে ইউরোপ রাশিয়ার চেয়ে অনেক গুণ ধনী। কিন্তু তিনি বলেন, ইউরোপ একটি দেশ না হওয়ায় তাদের সামরিক সম্ভাবনা ব্যাহত হচ্ছে।


বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্নির্মাণের অর্থায়ন ইউরোপের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ থেকে আসবে। কিছু হিসাব অনুযায়ী, পুনর্নির্মাণের জন্য ৫০ হাজার কোটি ডলার থেকে ২ হাজার লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে।


তবে, যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, ইউক্রেনের পুনর্নির্মাণের খরচ মেটানো ততই কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু যে মূল প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে, তা হলো – খরচ মেটাবে কে?


পশ্চিমা দেশের ব্যাংকে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ – যার মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে বিদেশী মুদ্রা আর সোনায় কোটি কোটি ডলার রয়েছে – ইউক্রেনের পুনর্নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা করতে রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।


অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, গণমাধ্যমে এই বিষয়ে তপ্ত বিতর্কের পরও, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সরকার এই ধরনের কোন পদক্ষেপ নেবে না।


বারনার্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্সান্ডার কুলি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইইউ আর পশ্চিমা দেশগুলোতে আইনগত লড়াই চলছে, এই বিষয় নিয়ে মামলা হচ্ছে এবং এখানে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে ... আমার মনে হয়, ট্রাম্প প্রশাসন রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পক্ষে থাকবে না, বিশেষ করে যখন তারা সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করছে। রাশিয়ার দিক থেকে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এবং পশ্চিমা দেশে তাদের সম্পদ মুক্ত করা তাদের মৌলিক দাবীর মধ্যে থাকবে।


নিউইয়র্ক-ভিত্তিক রাজনৈতিক ঝুঁকি কনসালটেন্সি কোম্পানি ইউরেশিয়া গ্রুপ-এর সভাপতি ক্লিফ কুপচান একমত হন যে, জব্দ করা রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পক্ষে ইউরোপের মত দেয়ার সম্ভাবনা নেই।


তারপরও, কুপচান বলছেন পুনর্নির্মাণের জন্য ইউরোপিয়ান বিনিয়োগ ইউক্রেনে আসবে, বিশেষ করে যদি টেকসই যুদ্ধবিরতি হয় এবং সেটা নিশ্চিত করতে পশ্চিমা শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার