মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকি কারণকে ২১ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলায় বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক যখন রায় পড়ছিলেন, তখন প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের চোখ পানিতে টলমল করছিল। দুজনকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল তখন।
রায় ঘোষণার পর প্রদীপকে কড়া পাহারায় প্রিজনভ্যানে তোলে পুলিশ। এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রদীপ বলতে থাকেন, ‘আমি দুর্নীতি করিনি। আমি দুর্নীতি করিনি।’ তার ১০ মিনিট পর প্রদীপের স্ত্রী চুমকিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
ব্যাপক হট্টগোল আর পুলিশের বাঁশির শব্দের মধ্যে প্রদীপকে বলতে শোনা যায়, আমাকে সিনহা হত্যা মামলায় যে রায় দেওয়া হয়েছে, ওখানেও আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আপনারা তদন্ত করে দেখেন। থানায় যদি বিভিন্ন অফিসার থাকে, বিভিন্ন এসআই থাকে, তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, ওই দায় দায়িত্ব তাদের।
‘আমি শুধুমাত্র সরকারের জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নের জন্য মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। যাতে যুব সমাজ ধ্বংস না হয়।’
প্রদীপের ১০-১৫ মিনিট পর আদালত থেকে চুমকিকে বের করা হয়। বাইরে থাকা সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমার স্বামী ভালো কাজ করায় বিভিন্ন মহল তার বিরুদ্ধে লেগেছে। ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে আমাদের সুখের সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে এদিন বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রদীপ ও চুমকিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের এজলাসে থাকা আসামির কাঠগড়ায় রাখা হয় প্রদীপকে, আর কাঠগড়ার বাইরে দাঁড়ান তার স্ত্রী চুমকি।
বেলা ১১টা ৭ মিনিটে বিচারক এজলাসে এসে রায় পড়া শুরু করেন। বিচারক রায় পড়া শুরু করলে দেখা যায়, প্রদীপ ও তার স্ত্রীর চোখ পানিতে টলমল করছে। দুজনই বেশ বিমর্ষ ছিলেন।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলা বিচারে আসে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে এপিবিএন চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় টেকনাফের ওসি প্রদীপকে কারাগারে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক।
ওই বছর ২৩ আগস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
চলতি বছরের গত ২৯ মে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছিল মোট ২৯ জনকে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিনসহ ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, প্রদীপ কুমার এবং চুমকি দাশের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন, মানি লন্ডারিং এবং সম্পদের অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজ রায় দেওয়া হয়েছে। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে সর্বমোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং চুমকি কারণকে ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। তাদের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।