বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে দেশটি যদি সুদূরপ্রসারী কাঠামোগত সংস্কার না করে, তবে সেখানে নতুন কোনো অর্থায়নের প্রস্তাব দেবে না বিশ্বব্যাংক।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে দেউলিয়া দ্বীপ দেশটিতে নতুন করে অর্থায়ন না করার কথা জানায় বিশ্বব্যাংক।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকটের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু দেশটির সরকার সেখানে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক কোনো অর্থায়ন করবে না।
এতে আরও বলা হয়, একটি কার্যকর সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক শ্রীলঙ্কায় নতুন কোনো অর্থায়নের পরিকল্পনা আপাতত করছে না।
বিশ্বব্যাংকের মতে, শ্রীলঙ্কার এই সংকট সৃষ্টিকারী মূল কাঠামোগত কারণগুলোকে চিহ্নিতপূর্বক সেগুলো সমাধান করতে দ্বীপ রাষ্ট্রটির কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
তবে নতুন করে অর্থায়ন না করলেও শ্রীলঙ্কায় জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ, রান্নার গ্যাস ও স্কুলের খাবারের জন্য ১৬ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এদিকে, শ্রীলঙ্কা এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে অর্থ সহায়তা নিয়ে আলোচনা করছে। তবে আইএমএফের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এর আগে, শ্রীলঙ্কা অভূতপূর্ব এক মন্দার সম্মুখীন হয়। দেশটির প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ গত কয়েক মাস ধরে খাদ্য ও জ্বালানি ঘাটতি এবং ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে।
বর্তমানে বিদেশি ঋণখেলাপিতে জর্জরিত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি। গত এপ্রিলে ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খেলাপি হয় দেশটির।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এমনকি তীব্র আন্দোলনের চাপে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
গত ৯ জুলাই হাজার হাজার বিক্ষোভকারী দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনে হামলা চালায়। এর ফলে দেশটির চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হয়। এ হামলার পরই দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া।
শ্রীলঙ্কার কাছে এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানির জন্য কোনো অর্থ নেই। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে গেছে। দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি সেখানের জনগণের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দেশটির গাড়িচালকদের রেশনযুক্ত পেট্রোল পেতে সারাদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। সংকট কাটাতে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের যাতায়াত কমানো ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ করতে বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মতে, শ্রীলঙ্কায় চলমান এই সংকটের কারণে দেশটির প্রতি ছয়টি পরিবারের মধ্যে পাঁচটি পরিবারই নিম্নমানের খাবার গ্রহণ করছে। এর মধ্যে কেউ কেউ অপর্যাপ্ত খাবার, কেউ আবার কোনো খাবারই পাচ্ছে না।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের উত্তরসূরি রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশের পরই গণবিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া বেশ কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এর ফলে সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি।