স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বাবার সেই ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল


, আপডেট করা হয়েছে : 24-04-2025

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বাবার সেই ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল

নানা আলোচনা সমালোচনার মুখে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে বিল্লাল হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ওই লাইসেন্সটি তাৎক্ষনিকভাবে বাতিল করে। এর আগে সকালে নিজের বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার ঘটনাকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ উল্লেখ করে ক্ষমা চান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।


বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিলে আবেদন করেন মো. বিল্লাল হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেনি এলজিইডির দায়িত্বশীলরা।



লাইসেন্স বাতিলে বিষয়টি নিশ্চিত করে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, ‘সব বিধি মেনেই তিনি (বিল্লাল হোসেন) ঠিকাদারি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। আজ বাতিলের আবেদন করায় বিধি মোতাবেক লাইসেন্সটি বাতিল করে কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।’


এর আগে গত ১৬ মার্চ মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়। তবে এখনও এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে জেলার কোনো এলজিইডির কার্যালয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।


আলোচনায় আসা ওই লাইসেন্সটিতে দেখা যায়, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, ভ্যাট রেজি.সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর গত ১০ মার্চ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর অনুমোদনের প্রেক্ষিতে কুমিল্লার জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ (ওই লাইসেন্স) অনুমোদন লাভ করে। গত ১৬ মার্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকার ব্যাংক চালান দেওয়ার পরই ওই দিন নির্বাহী প্রকৌশলী লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন। এতে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মুরাদনগর উপজেলার আকবপুর গ্রাম। এর মেয়াদ উল্লেখ আছে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।


ঠিকাদারি লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়ে বুধবার দুপুরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, দেশে এর আগেও সব মন্ত্রী এমপির স্বজনরাও তো ঠিকাদারি লাইসেন্স করে কাজ করেছে। তবে ছেলেকে (আসিফ) না জানিয়ে লাইসেন্স করাটা ভুল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এমন সমালোচনা হবে চিন্তা করিনি। এ নিয়ে আমি সত্যি বিব্রত। আমি লাইসেন্সটি বাতিলের আবেদন করেছি। এরই মধ্যে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানতে পেরেছি। এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।


এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।


আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, গত বুধবার রাত ৯টার দিকে একজন সাংবাদিক ফোন করে তার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চান। এরপর তিনি বাবার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন যে, এটি জেলা পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ইস্যু করা একটি লাইসেন্স। বিষয়টি সাংবাদিককে জানানো হলে তা গণমাধ্যমে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হয় এবং তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়।  


আসিফ জানান, তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক এবং বর্তমানে আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় এক ঠিকাদারের অনুরোধে এবং তাকে সুবিধা দিতে গিয়ে বাবার পরিচয় ব্যবহার করে লাইসেন্স ইস্যুর পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই পরামর্শেই তার বাবা জেলা পর্যায় থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করেন।


আসিফ স্বীকার করেন, একজন মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে তার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করা স্বার্থের দ্বন্দ্ব (Conflict of Interest) সৃষ্টি করে। বিষয়টি বোঝানোর পর তার বাবা লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেন এবং সেটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়।  


তিনি বলেন, 'বাবা সম্ভবত স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারেননি। এজন্য আমি বাবার পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।'  


আসিফ মাহমুদ আরও জানান, ওই লাইসেন্সের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন জমা দেওয়া হয়নি।


এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে আসিফ মাহমুদের এই ব্যাখ্যা আসে, যেখানে তিনি স্বচ্ছতা বজায় রাখার অঙ্গীকারের কথাও উল্লেখ করেন।


উল্লেখ্য, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছেন বলে বুধবার (২৩ এপ্রিল) দাবি করেছিলেন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী জুলকারনাইন সায়ের। তিনি লিখেছিলেন, 'এ বিষয়ে জানতে আমি উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান ও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি সময় নিয়ে যাচাই করে জানান, লাইসেন্সের বিষয়টি সঠিক, কিন্তু এটা তার জ্ঞাতসারে করা হয়নি।'



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার