গ্রেফতারের পর কারাগারে নোবেল


, আপডেট করা হয়েছে : 20-05-2025

গ্রেফতারের পর কারাগারে নোবেল

ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেলকে (৩১) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। 


মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে নোবেলকে সিএমএম আদালতে আনা হয়। বেলা তিনটার দিকে তাকে আদালতকক্ষে তোলা হয়।


ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ৭ মাস ঘরে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন ও একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে নোবেলকে গ্রেফতার করে ডেমরা পুলিশ। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর ফোন পেয়ে গত সোমবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী মেয়েটিকে ডেমরার আমতলা এলাকায় নোবেলের নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। নোবেল ওই এলাকার মোজাফ্ফর এইচ নান্নুর ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ঘোষের চর এলাকায়। 


এই ঘটনায় নোবেল ও তার ২ থেকে ৩ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে সোমবার রাতে ডেমরা থানায় মামলা করেন ওই যুবতী।


জানা যায়, ভুক্তভোগী এ নারী শিক্ষার্থী ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে তার পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এদিকে গত বছর ১২ নভেম্বর নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে মেয়েটিকে ডেমরায় নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন।  পরে ওই নারীকে আটকে রাখেন এবং তার মোবাইল ভেঙে ফেলেন।  পরবর্তীতে নোবেল মেয়েটিকে ধর্ষণ ভিডিও ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেন। 


আরও জানা যায়, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নোবেল তাকে মারধর করতেন এবং একপর্যায়ে চুল ধরে টেনে আরেক কক্ষে নিয়ে আটক রাখতেন। পরে  চুলের মুঠি ধরে সিঁড়ি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে শনাক্ত করেন। 


ডেমরা থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার রাত ২টার দিকে নোবেলকে গ্রেফতার করা হয়। নোবেল সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ জন্য তিনি একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন। তবে পালানোর আগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।


দু’বছর আগেও নোবেলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তখন প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেফতার হন তিনি। একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন এ গায়ক। কিন্তু পরে তিনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এ ঘটনায় ২০২৩ সালে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। 


উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত নানা আচরণের কারণে বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেনে নোবেল। একাধিক বিয়ে করেও আলোচনায় এসেছিলেন এই গায়ক। কিন্তু কোনো সংসারই স্থায়ী হয়নি। ২০১৯ সালে সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করে আলোচনার সৃষ্টি করেন নোবেল। কিন্তু মাদক ত্যাগ না করায় সে সংসার টেকেনি। এরপর ২০২৩ সালের শেষে ফের নোবেলের বিয়ের খবর সামনে আসে। 


প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলার গানের শো ‘সা রে গা মা পা’য় অংশ নিয়ে সবার নজরে আসেন নোবেল। তার গান দর্শকের মনে স্থান করে নেয়। পরে তার বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পায়। তবে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই তাকে ঘিরে আলচনা-সমালোচনা ছিল। একটা সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শো করতে গেলেও সেখানেও তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। ২০২৩ সালে কুড়িগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন তিনি। কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নোবেলের আচরণে বিরক্ত হয়ে দর্শকরা জুতা ও পানির বোতল ছুড়ে মারেন এ শিল্পীর দিকে। সেই ঘটনাটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। 



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার