ইসরাইলের ইরান যুদ্ধের আড়ালে এক ঘৃণ্য কূটনৈতিক খেলা


, আপডেট করা হয়েছে : 16-06-2025

ইসরাইলের ইরান যুদ্ধের আড়ালে এক ঘৃণ্য কূটনৈতিক খেলা

ইসরাইলের ইরান যুদ্ধের আড়ালে জমে উঠছে এক ঘৃণ্য কূটনৈতিক খেলা। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন কি শুধুই পারমাণবিক কর্মসূচি ভাঙার প্রচেষ্টা? নাকি এর গভীরে রয়েছে ভিন রাষ্ট্রে ‘সরকার পতন’র মতো আরও বড় রাজনৈতিক লক্ষ্য?


মধ্যপ্রাচ্যে জটিল উত্তেজনার আবহে এই প্রশ্ন এখন বিশ্লেষকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট (এমইআই) আয়োজিত আলোচনায় সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা-ইসরাইলের কৌশলগত আক্রমণ শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, বরং তা হতে পারে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ইরানের শাসনব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। শনিবার একটি ভার্চুয়াল প্যানেলের আয়োজন করে এমইআই। যেখানে বিশ্লেষকরা ইসরাইল-ইরান চলমান যুদ্ধের ভবিষ্যৎ, কূটনৈতিক সম্ভাবনা এবং আঞ্চলিক পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেন।


আলোচনায় অংশ নেন-ইরানবিষয়ক বিশ্লেষক ও মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো আলেক্স ভাটাঙ্কা, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সাবেক প্রধান জেনারেল জোসেফ এল. ভোটেল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহরের সাবেক কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল কেভিন ডোনেগান। ভাটাঙ্কা বলেছেন, ‘ইসরাইল কি শুধু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করতে চায়, নাকি সরকার পতনের দিকে এগোচ্ছে এটা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনা প্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে, হয়তো সে পথেই এগোচ্ছে ইসরাইল।’ তিনি আরও বলেছেন, অনেক ইরানি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, ইসরাইলের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাদের শাসনব্যবস্থা উৎখাত করা।


অ্যাডমিরাল ডোনেগান বলেছেন, ‘আমার দৃষ্টিতে, নিকট ভবিষ্যতে ইসরাইল-ইরানের আলোচনায় আসার সম্ভাবনা খুবই কম।’ তিনি আরও বলেছেন, ইরান চাইলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করতে পারে। তবে তাতে তাদের নিজেদের অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


আলোচনার শেষ অংশে ভাটাঙ্কা বলেছেন, যুদ্ধের ‘সমাপ্তি’ নির্ভর করছে ইসরাইলের উদ্দেশ্যের গভীরতার ওপর। বিশ্লেষকদের মন্তব্য ইঙ্গিত করছে, চলমান ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ শুধু সীমিত সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং তা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক পালাবদলেরও সূচনা হতে পারে।


এর আগে শুক্রবার রাতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরাইলের লড়াই ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াই তাদের (ইরান) শাসনের বিরুদ্ধে।’ ইরান ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’র জবাবে ইসরাইলে পালটা হামলা চালানোর পরপরই এই মন্তব্য করেন তিনি। 


কিন্তু রোববার নেতানিয়াহুর ওই বক্তব্যকেই একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত সিপি হোতোভেলি। বললেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানে সরকার পরিবর্তন চান না। বরং ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে ধ্বংস করা এবং গাজা, ইয়েমেন ও লেবাননে ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর প্রতি ইরানের সমর্থন বন্ধ করা। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা জানান তিনি। নেতানিয়াহুর বক্তব্যের জেরেই বিশ্লেষকদের ধারণা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অনেকেই আবার ধারণা করছেন, এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে না।


ভাটাঙ্কা বলেছেন, ‘ইরানের কাছে যুদ্ধ জয়ের মানে হলো, তাদের শাসনব্যবস্থা টিকে থাকা। কিন্তু তারা আন্তর্জাতিকভাবে একা। ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশ সমর্থন করছে। অন্যদিকে বিশ্বস্ত কোনো মিত্রকে পাশে পাচ্ছে না ইরান। এদিকে ‘অক্স অব রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত ইরানের মিত্র হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুথি সবাই বর্তমানে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সিরিয়া, এই জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর আর সহায়কের ভূমিকায় নেই দেশটি।’



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার