জ্বালানি তেল কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। গত কয়েকদিনে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে বেড়েছে বিভিন্ন সবজির দাম। সেই সঙ্গে বেড়েছে মুরগি এবং ডিমের দামও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পটল, কাঁচা পেঁপে, ঝিঙাসহ কয়েকটি সবজির সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে সরবরাহ বাড়ার পরও সবজির দাম কমার বদলে উল্টো বেড়েছে।
গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ৩৪ বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। যা ওইদিন রাত ১২টার পর থেকেই কার্যকর হয়েছে।
জ্বালানি তেলের এমন নজিরবিহীন দাম বাড়ার কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং মূল্যস্ফীতি উস্কে দেবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। সেই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে বলে অভিমত তাদের।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শিম। এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) শিম কিনতে ক্রেতাদের কমপক্ষে ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। এ হিসাবে এক কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে শিমের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা ছিল।
শিমের এমন দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, বাজারে শিম আসছে দুই-তিন সপ্তাহ ধরে। আগের চেয়ে শিমের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। এতে শিমের দাম কিছুটা কমার কথা। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমার বদলে বেড়েছে। শুধু শিম না, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে।
এদিকে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, যা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম বেড়ে এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা হয়েছে।
jagonews24
দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে বরবটি, শসা, কাঁচা পেঁপে, পটল, বেগুন, ঝিঙে, কাঁচ কলা, করলাসহ অন্যান্য সবজি। বরবটির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, যা আগে ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম বেড়ে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা হয়েছে। কচুর লতি, ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
সবজির এমন দাম বাড়ার বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. জুয়েল বলেন, আড়তে সব সবজির দাম বেড়ে গেছে। সাধারণত শুক্রবার সবজির দাম একটু বেশি থাকে। কিন্তু দুই-তিনদিন ধরে সবজির অনেক দাম। শুক্রবারের তুলনায় এখন আড়তে সবজির দাম বেশি।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সবজির এই দাম বেড়ে গেছে। কয়দিন পর দেখবেন চাল, ডালসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। কারণ এখন পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফুল বলেন, তেলের দাম বাড়ার কারণেই সবজির এই দাম বেড়েছে। এখন সবজি পরিবহনে ব্যাপারীদের প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তেলের দাম না বাড়লে, এখন কিছু সবজির দাম কমতো।
রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. আলমগীর বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে। একশ টাকা দিয়ে দু-বেলার সবজি কেনাই কঠিন হয়ে গেছে। চাল, তেলের দাম অনেক আগে থেকেই বাড়তি। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়লে আমাদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা কেজিতে। গত শুক্রবার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেন ১৬০ টাকা কেজি। এ হিসেবে তিনদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে।
মালিবাগ বাজারে মুরগি কিনতে আসা আলেয়া বেগম বলেন, অতিরিক্ত দামের কারণে গরুর মাংস খাওয়া অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে মধ্যে ব্রয়লার মুরগি কিনি, যেভাবে দাম বাড়ছে এখন মনে হচ্ছে সামনে সেটাও কপালে জুটবে না।
তিনি বলেন, এমনিতেই বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। এ পরিস্থিতিতে তেলের দাম বাড়ানো উচিত হয়নি। তেলের দাম বাড়ানোর কারণে সবকিছুর দাম বাড়া শুরু হয়ে গেছে। এতে আমাদের যে কী কষ্ট হচ্ছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।