রাজশাহীর চারঘাটে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা কাঠ বেচাকেনার ব্যবসা করছেন। গত বছর ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর তিনি এভাবে ব্যবসা করেন। এতে শিক্ষার্থীদের চালচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
ওই ব্যবসায়ীর কারণে বিদ্যালয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আছে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। ইউএনও সরেজমিন এসে ওই ব্যবসায়ীকে ডেকে কাঠ সরাতে বলেছেন। তারপরও তিনি কাঠ সরাননি, বরং বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়টির নাম পুঠিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। ওই নেতার নাম ইদ্রিস আলী (৫০)। তিনি পুঠিমারী ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাপিয়া খাতুন গত ২৯ মে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে কাঠ সরানোর ব্যবস্থা করার জন্য চারঘাটের ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, বিদ্যালয়ের মাঠের কিছু অংশ বেদখল হয়ে আছে। সেখানে স্থানীয় জনগণ কাঠ রেখে ব্যবসা করছেন। এতে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের চলাফেরা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। কয়েক মাস আগে ইউএনও এসে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই ব্যবসায়ীকে বিদ্যালয় মাঠ থেকে তাঁর কাঠ সরিয়ে নিতে বলেন। তখন তিনি কাঠ সরিয়ে নেন; ১৫ দিন পর আবার রাখেন।
রোববার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুঠিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের একাংশে কাঠের গুঁড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। কাঠের ছবি তোলার সময় ইদ্রিস আলী ছুটে আসেন। তিনি ছবি তোলার কারণ এবং এই প্রতিবেদকের মুঠোফোন নম্বর ও নাম জানতে চান। তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর নাম ইদ্রিস আলী। তিনিই এখানে কাঠ রেখেছেন। তিনি দাবি করেন, ইউএনও এসে তাঁকে কাঠ সরাতে বলেছেন। কিন্তু মাঠে সাপ্তাহিক সবজির হাট বসে। ইউএনও সবজি হাট বন্ধ করার নির্দেশ দেননি। তা ছাড়া বিদ্যালয়ের মাঠের সঙ্গে খাস জমিও রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, বিদ্যালয় ছুটির পরে মাঠের এক কোণে সপ্তাহে দুদিন ছোট আকারে সবজি বাজার বসে। এতে বিদ্যালয়ের কোনো সমস্যা হয়নি। উপরন্তু সরকার সেখান থেকে রাজস্ব পায়। কিন্তু কাঠ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী অবৈধভাবে মাঠ দখল করে ব্যবসা করছেন। ২৪ ঘণ্টা কাঠ মাঠে পড়ে থাকে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাপিয়া খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই ইদ্রিস আলী বিদ্যালয় মাঠ দখল করে কাঠ রাখছেন। এ কারণে তাঁরা সীমানাপ্রাচীরের কাজ শেষ করতে পারছেন না। ইউএনও এসে নিষেধ করার পরে তিনি কাঠ সরিয়েছিলেন। ১৫ দিন পর আবার কাঠ নিয়ে এসে ফেলেছেন।
এ সম্পর্কে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম নবী প্রথম আলোকে বলেন, ইদ্রিস আলী একেবারে অবৈধভাবে মাঠ দখল করে কাঠের ব্যবসা করছেন। তিনি (গোলাম নবী) বিএনপি নেতা এবং ২ হাজার ৮০০ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ইদ্রিস আলীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। ইদ্রিস তাঁর কোনো কথা শোনেননি বরং তাঁর সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেছেন। বাজে কথা বলেছেন।
গোলাম নবী আরও বলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ (চাঁদ) এসে বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে কাঠ সরাতে বলে গেছেন। তারপরও ইদ্রিস কথা শুনছেন না। তিনি তাঁর মতো করে চলছেন।
জানতে চাইলে আবু সাইদ বলেন, তিনি গত শুক্রবার গিয়ে ইদ্রিস আলীকে কাঠ সরিয়ে নিতে বলেছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করবে। তাদের কাজে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
চারঘাটের ইউএনও জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যবসায়ী মাঠ ছাড়েননি—এটা তিনি অবগত ছিলেন না। বিষয়টি জানানোর জন্য তিনি প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।