বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগ দেবে ডিসির নেতৃত্বাধীন কমিটি


, আপডেট করা হয়েছে : 30-09-2025

বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগ দেবে ডিসির নেতৃত্বাধীন কমিটি

বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে কর্তৃত্ব হারাল পরিচালনা পর্ষদ বা ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশে বলা হয়েছে, 'সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এসব পদে নিয়োগ সুপারিশ কমিটি গঠিত হবে। আর এ কমিটিতে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির কোনো সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবেন না।' দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ছাড়া অন্যান্য এমপিওভুক্ত কর্মচারী পদে নিয়োগে গঠিত কমিটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে গঠিত হতো। এসব পদে নিয়োগে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল।


বেসরকারি খাতে বর্তমানে ৯২ হাজার ৩৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাসিক পে-অর্ডার (এমপিও) সুবিধাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ২৬ হাজার ১০৪টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে আসছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। রবিবার রাতে জারি করা 'বেসরকারি স্কুল-কলেজের প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক ব্যতীত অন্যান্য পদে অনুসরণীয় নির্দেশমালা' পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন। জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ বিধান করা হয়েছে।


পরিপত্রে বলা হয়, শিক্ষক ছাড়া অন্যান্য এমপিওভুক্ত কর্মচারী পদে নিয়োগে সুপারিশ কমিটির সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার সবচেয়ে পুরোনো সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বা তার প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের একজন প্রতিনিধি (পরিদর্শকের নিচে নয়) এবং সংশ্লিষ্ট জেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক বা সহকারী পরিচালক। কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। আরো বলা হয়, নিয়োগ সুপারিশ কমিটি পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রস্তুত ও নিয়োগের সুপারিশ দেবে। নিয়োগ সুপারিশ কমিটি মৌখিক পরীক্ষার সময় প্রয়োজনে একাধিক বোর্ড গঠন করতে পারবে। জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির নেতৃত্বে নবম গ্রেডের নিম্নে নয় এমন তিন সদস্যবিশিষ্ট বোর্ড গঠিত হবে।


সোমবার জারিকৃত নতুন পরিপত্রে নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট সময়সীমা, দায়িত্ব এবং বিধিনিষেধ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও স্নাতক পাশ কলেজসমূহে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক ব্যতীত ট্রেড অ্যাসিস্ট্যান্ট, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, হিসাব সহকারী, ল্যাব সহকারী, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, আয়া, অফিস সহায়কসহ অন্যান্য পদের জন্য নিয়োগ সুপারিশ প্রদান ও নিয়োগপত্র ইস্যুসংক্রান্ত নির্দেশনা এই পরিপত্রের মাধ্যমে জারি করা হলো।


আরো বলা হয়, নিয়োগ কমিটির কাছ থেকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে প্রার্থীকে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে নিয়োগপত্র পাঠাতে হবে। এ সময়ের মধ্যে নিয়োগপত্র না পাঠালে তা 'অসদাচরণ' হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও স্থগিতসহ বিধিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া দায়িত্বহীন আচরণের জন্য ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি বাতিলের সুপারিশ করা হবে। শূন্যপদ নিরূপণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধান এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুযায়ী যথাযথ যাচাই করে শূন্য বা নবসৃষ্ট পদের বিবরণী তৈরি করবেন এবং তা প্রতি বছর ৩১ আগস্টের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠাবেন। জেলা শিক্ষা অফিসার একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে এসব তথ্য প্রেরণ করবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপজেলাভিত্তিক শূন্য পদের তালিকা চূড়ান্ত করবে। প্রাপ্যতাবিহীন পদের জন্য নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হলে তার দায়ভার সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বহন করতে হবে বলেও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।


সুপারিশ পাওয়ার পর ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডিকে সভা করে নিয়োগ রেজুলেশন পাশ করতে হবে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীর আবেদনে উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর একটি নির্ধারিত টেমপ্লেট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে, যা নিয়োগপত্র ইস্যুর জন্য ব্যবহার করতে হবে। নিয়োগপত্র ইস্যু থেকে শুরু করে শূন্যপদ নিরূপণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে। পরিপত্রে আরো বলা হয়, এ নির্দেশনার বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। নতুন পরিপত্রের ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি জারি করা পরিপত্রের সংশ্লিষ্ট অংশসমূহ রহিত হয়েছে।


এদিকে, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ না পাওয়া প্রার্থীদের বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হতে পারে। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার আলোচনা শেষে প্রার্থীদের এমন আশ্বাস দিয়েছে এনটিআরসিএ।


শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি এবং মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে। স্কুল-কলেজ এবং কারিগরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বর বিষয়ভিত্তিক এবং অবশিষ্ট ১০০ নম্বর হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ওপর। জানা গেছে, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নম্বরের বেশ পার্থক্য থাকছে। মাদ্রাসায় পরীক্ষা ২০০ নম্বরের মধ্যে হলেও ১৪০ নম্বর হবে বিষয়ভিত্তিক। অবশিষ্ট ৬০ নম্বর হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার