৬০০ কোটি টাকার কাজ ২০০ কোটিতে করতে চায় কয়েকটি ছাপাখানা!


, আপডেট করা হয়েছে : 01-10-2025

৬০০ কোটি টাকার কাজ ২০০ কোটিতে করতে চায় কয়েকটি ছাপাখানা!

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিকের ২১ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো নিয়ে সংকট এখনো কাটেনি। পাঁচ মাস আগে টেন্ডার হলেও ক্রয় কমিটির অনুমোদন না হওয়ায় নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ আটকে আছে। অন্যদিকে বহুল আলোচিত দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ১১ কোটি ৮৯ লাখ বই ছাপানোর টেন্ডার বাতিল করে এক মাস আগে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। পুনঃদরপত্রে সিন্ডিকেট ভেঙেছে ঠিকই, তবে নতুন করে সংকট সামনে এসেছে। সর্বনিম্ন দরদাতার রেট প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। যা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।


জানা গেছে, এসব বইয়ের প্রতি ফর্মায় সরকারের বাজেট ৩ টাকা ১৫ পয়সা। বাজার মূল্যে প্রতি ফর্মা ছাপাতে ন্যূনতম খরচ ২ টাকা ৪০ পয়সা। অথচ কয়েকটি প্রেস সিন্ডিকেট করে ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৯ পয়সা পর্যন্ত রেট দিয়েছে। ১১ কোটি ৮৯ লাখ বই ছাপাতে সরকার খরচ নির্ধারণ করেছিল প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এক শ্রেণির ছাপাখানা ৬০০ কোটি টাকার কাজ ২০০ কোটিতে করতে চাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কম রেটে কাজ নেওয়ার ফল ভালো হয় না। কেননা, কম রেটে কাজ নিয়ে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর নজির আগেও বহুবার দেখা গেছে। তাই এ বিষয়ে আগে-ভাগেই সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিশেষজ্ঞরা।


এ ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপাতে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, সেখানে কেউ ন্যূনতম খরচের রেটই দেননি। অনেকে আবার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে তিন ভাগ কম দর দিয়েছেন। এটা নিশ্চিত অস্বাভাবিক আচরণ। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এনসিটিবি। রিটেন্ডার দেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ক্রয় কমিটি যে সিদ্ধান্ত জানাবে, এনসিটিবি তা বাস্তবায়ন করবে। এখনো দরপত্র চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে দামেই দিক না কেন, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর চেষ্টা করলে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


অন্যদিকে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপাতে রিটেন্ডার দেওয়া হচ্ছে না, আবার অনুমোদনও দিচ্ছে না ক্রয় কমিটি। সব মিলিয়ে এবার সঠিক সময়ে পাঠ্যবই ছাপাতে বেশ বেগ পেতে হবে। বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই পাওয়া নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।


আগামী বছরের জন্য ৩০ কোটির মতো, নতুন বই ছাপাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ পুরোদমে চললেও, মাধ্যমিকের কাজ নিয়ে চলছে সংকট। পাঁচটি ছাপাখানার মালিক ইত্তেফাককে বলেন, নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ কেন আটকে রাখা হয়েছে তা তারা জানেন না। এখন কার্যাদেশ দিলে ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু বই ছাপানো সম্ভব হবে। কার্যাদেশ দিতে যত বিলম্ব হবে, শিক্ষার্থীরা তত দেরিতে বই পাবে।


বাংলাদেশ মুদ্রণ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবির উচিত বাজার যাচাই করে কাজ দেওয়া। আমরা মনে করি, সর্বনিম্ন যে দর এসেছে, এই দরে অনেকেই কাজ দিতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রক্কলিত দরের চেয়ে ১০ ভাগ কম বা বেশি দর হলে ব্যবস্থা নিতে পারে এনসিটিবি। এখানে ৪০ থেকে ৭৫ ভাগ কম দর দেওয়া হয়েছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক বলেন, এনসিটিবি প্রতি বছর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও বইয়ের নিম্নমানের কাগজ ঠেকাতে পারছেন না। এ ব্যাপারে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।



  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার