ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র আন্তর্জাতিক সেচ্ছাসেবক ও সুইডিশ জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গ ইসরায়েলের কারাগারে দুর্ব্যবহার ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা আদালাহ শনিবার (৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বহু আটককৃত অধিকারকর্মী কারাগারে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি পাচ্ছেন না এবং কেউ কেউ ইসরায়েলি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান–এর শনিবারের প্রতিবেদনে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইডেনের ২২ বছর বয়সী জলবায়ু আন্দোলনকর্মী থুনবার্গকে ইসরায়েলি কারাগারে কঠোর ও অনুপযুক্ত পরিবেশে রাখা হয়েছে। বুধবার রাতে গাজাগামী ফ্লোটিলা অভিযানে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ৪২টি নৌযানসহ ৪৫০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মীকে আটক করে। এদের মধ্যে ১৩৭ জনকে তুরস্কের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
আদালাহ জানায়, এক বন্দি আইনজীবীকে জানিয়েছেন যে তাকে এবং গ্রেটা থুনবার্গকে আটক করার পর ইসরায়েলি পতাকার সামনে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করা হয়েছিল। সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানা যায়, দূতাবাস কর্মকর্তারা থুনবার্গের সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন। থুনবার্গ জানান, তিনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন, কারণ পর্যাপ্ত পানি ও খাবার পাচ্ছেন না।
সুইডিশ দূতাবাসের এক ইমেইলে বলা হয়েছে, থুনবার্গের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছে, যা তিনি বেডবাগ বা ছারপোকার কারণে হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত মেঝেতে বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং বন্দিদের সঙ্গে কারারক্ষীদের আচরণ ছিল অত্যন্ত কঠোর।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট এরসিন চেলিক বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ থুনবার্গকে লক্ষ্যবস্তু করে নির্যাতন চালায় এবং তাকে ‘ইসরায়েলি পতাকায় চুম্বন করতে বাধ্য’ করা হয়। তবে ইসরায়েলি কারা প্রশাসনের এক মুখপাত্র জানান, তিনি এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে ‘অবগত নন’।
আদালাহর আইনজীবীদের কাছে আরও বহু বন্দি অভিযোগ করেছেন যে, আটক প্রক্রিয়ার সময় তাদের ধাক্কা দেওয়া, মাটিতে ফেলে রাখা, এবং মুষ্টিবদ্ধ আঘাত করার মতো ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল, অভিবাসন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার আগ পর্যন্ত তাদের কোনো বিশ্রাম দেওয়া হয়নি।
চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির কেতজিওত কারাগার পরিদর্শন করে বলেন, ফ্লোটিলা সদস্যদের ‘ন্যূনতমেরও ন্যূনতম’ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, 'যেমনটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সন্ত্রাসবাদের সমর্থক এই অধিকারকর্মীরা এখন নিরাপত্তা কারাগারে আছেন। তারা এখানে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বন্দিদের মতোই কঠোর শর্তে রয়েছে।' বেন গভির অতীতেও ফিলিস্তিনি বন্দিদের জন্য কারাগারের আরও কঠোর পরিবেশ চালুর দাবি জানিয়েছিলেন।
মানবিক সহায়তা ও গাজার ওপর আরোপিত দীর্ঘস্থায়ী নৌ অবরোধের প্রতিবাদে এই ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ যাত্রা শুরু করেছিল বলে জানা যায়।