রাজশাহী শহরে ‘ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের আওতায় শতবর্ষী ও পঞ্চাশোর্ধ্ব গাছ কাটার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের পক্ষে থাকা সচেতন নাগরিকরা। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে গাছগুলো সংরক্ষণের দাবিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি প্রদান করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ রায়হান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন ঝিনুক, সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. তাছমিনা খাতুনের দপ্তরে তাদের এই চিঠি পাঠানো হয়।
এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ-এর সচিবদের কাছেও ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহীর ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে পানি শোধনাগার নির্মাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলেও এর জন্য ৪০-১০০ বছরের পুরনো গাছগুলো কাটা অনুচিত। এসব গাছের মধ্যে কড়াই, আম, নিমসহ নানা দেশীয় প্রজাতি রয়েছে, যেগুলো পাখি, প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে পরিবেশ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর ২৩ ধারায় এসব পুরনো গাছকে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করার সুযোগ রয়েছে।
সচেতন নাগরিকদের মতে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী অঞ্চল প্রাকৃতিকভাবে খরাপ্রবণ ও রুক্ষ।
এমন অঞ্চলে গাছগুলো শুধু ছায়া নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য। ইতিমধ্যে রাস্তার এক পাশের গাছ কেটে ফেলার ফলে এলাকাটি অনেকটা মরুভূমির মতো দেখাচ্ছে বলেও জানান তারা।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সবুজ সংহতির আহ্বায়ক ও নদী ও পরিবেশ গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, উন্নয়নকর্মী মো. আফজাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ও জুলাই-৩৬ পরিষদের সভাপতি মাহমুদ জামাল কাদেরী, সেভ দি নেচার অ্যান্ড লাইফের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট হোসেন আলী পিয়ারা, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল, সামাজিক কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সম্রাট রায়হান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ওয়ালিউর রহমান বাবু, গ্রীন ভয়েস রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি রাবেয়া খাতুন ও ০.৬ গ্রাভিটি রাইডার্স-এর সভাপতি মাসুম মাহবুব প্রমুখ।
তাদের দাবি, ‘উন্নয়ন হোক, কিন্তু তা যেন প্রকৃতির বিনাশ ডেকে না আনে।