রাজশাহীতে কর্মশালা: ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সচেতন নাগরিকই রাষ্ট্রের শক্তি


, আপডেট করা হয়েছে : 11-10-2025

রাজশাহীতে কর্মশালা: ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সচেতন নাগরিকই রাষ্ট্রের শক্তি

আইনের মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র আদালতের কাজ নয়; এটি সমাজের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। সচেতন নাগরিকরাই রাষ্ট্রের প্রকৃত শক্তি।’— শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ‘সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার বিষয়ক কর্মশালা’-এ বক্তারা এ কথা বলেন।


বক্তারা আরও বলেন, অধিকার সচেতন নাগরিকই একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গঠনের মূল চালিকা শক্তি। সংবিধান ও আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। নাগরিকদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা রক্ষায় উদ্যোগী হওয়াই গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত করে।


রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ কর্মশালার আয়োজন করে আইন প্রণয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আইন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রকল্প, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার।


কর্মশালায় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহিদ ইবনে মিরাজ এর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব জিএম আতিকুর রহমান জামালী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহকারী সচিব মুহাম্মদ হারেস।


বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল হালিম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) উম্মে কুলসুম সম্পা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার, আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা জজ সাদিয়া সুলতানা, ডেপুটি সিভিল সার্জন মাহবুবা খাতুন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম মিয়া।


দিনব্যাপী এ কর্মশালায় অংশ নেন প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।


সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, “সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই সে বিষয়ে অবহিত নয়। প্রশাসনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।”


মূল প্রবন্ধে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ব্যাখ্যা করা হয়। বক্তারা উল্লেখ করেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং অনুচ্ছেদ ২৮ অনুযায়ী বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যাবে না।


কর্মশালায় জানানো হয়, সরকারের ‘আইন প্রণয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আইন বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি প্রকল্প’ হচ্ছে এসডিজি লক্ষ্য ১৬-বি এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ। এর লক্ষ্য হলো দক্ষ লেজিসলেটিভ কর্মকর্তা তৈরি, মানসম্মত আইন প্রণয়ন, ‘Laws of Bangladesh’ ওয়েবসাইট আধুনিকায়ন, বাংলা ভাষায় ‘লেজিসলেটিভ ডেস্কবুক’ প্রণয়ন, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ই-লাইব্রেরি স্থাপন এবং জনগণের মাঝে আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি।


উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে প্রশাসন, আইনপ্রণেতা ও নাগরিক সমাজের পারস্পরিক সহযোগিতা অপরিহার্য। আইনি সচেতনতা বৃদ্ধির এ উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”


অতিরিক্ত জেলা জজ সাদিয়া সুলতানা বলেন, “আইন সম্পর্কে সচেতনতা শুধু প্রশাসনের দায়িত্ব নয়; নাগরিকরাও নিজ নিজ অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত হওয়া জরুরি। সচেতন নাগরিকই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে।”


আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. গাজিউর রহমান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নাগরিক অধিকার রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সবাই আইন মেনে চললে সমাজে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, “সংবিধান ও আইন সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রশাসন, আইনপ্রণেতা ও সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনশৃঙ্খলা আরও দৃঢ় হয়।”


এডিএম উম্মে কুলসুম সম্পা বলেন, “অধিকাংশ মানুষ তাদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখেন না। এ ধরনের কর্মশালা সেই জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে।”


ডেপুটি সিভিল সার্জন মাহবুবা খাতুন বলেন, “স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার। আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়লে নাগরিকরা এসব অধিকার যথাযথভাবে দাবি করতে পারবেন।”


  • সম্পাদক ও প্রকাশক: ইঞ্জিনিয়ার মো: রায়হানুল ইসলাম

  • উপদেষ্টাঃ মোঃ ইব্রাহীম হায়দার